কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
হাওড়ার একটি স্কুলের নিয়োগের সরকারি প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার দফতরের অধিকর্তা। শুক্রবার সেই নির্দেশিকা খারিজ করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত। তাঁর নির্দেশ, আগামী এক মাসের মধ্যে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে মোট ৬টি পদের ওই প্যানেলকেই স্বীকৃতি দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। তার পর দ্রুত নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দিতে হবে।
হাওড়ার বৃন্দাবনপুরে আনন্দ ভবন নামে মূক এবং দৃষ্টিহীনদের একটি স্কুল আছে। সেটি রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার দফতরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ২০১৮ সালে ওই স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী পদে মোট ৬ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সংবাদপত্রে নিয়মমাফিক বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, স্কুল যে মহকুমায় অবস্থিত সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি সেই নিয়োগের দায়িত্বে থাকে। এ ক্ষেত্রেও নিয়মমাফিক ইন্টারভিউয়ের পরে প্যানেল তৈরি করে জনশিক্ষা প্রসার দফতরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দফতরের অধিকর্তা সেই প্যানেল বাতিল করে দেন। তা নিয়েই মামলা হয়েছিল।
মামলাকারীদের আইনজীবী এক্রামুল বারি কোর্টে জানান, প্যানেল বাতিলের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেখানো হয়নি। যদিও রাজ্য সরকার এবং মামলায় যুক্ত বিবাদী পক্ষ জানায়, নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতিগত সংরক্ষণ-সহ কিছু নিয়ম মানা হয়নি। নিয়োগের কমিটিও ঠিক মতো গঠিত হয়নি। এমনকী, কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী নিয়োগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের আত্মীয়। সেই যুক্তির পাল্টা হিসাবে এক্রামুল বারি কোর্টে জানান, নিয়োগের প্যানেল তৈরি হওয়ার পরে সরকারি কর্তারা এ ভাবে নিজেদের অবস্থান বদল পারে না। জাতিগত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা না হলে কী করা উচিত সে সম্পর্কিত সরকারি বিজ্ঞপ্তি কোর্টে জমা দিয়ে জানান, পরবর্তী কালে ‘রস্টার’ বদল করার শর্তে এই প্যানেল থেকে নিয়োগ হতে পারে। নিয়োগের কমিটি গঠনেও কোনও বেনিয়ম হয়নি। ঘটনাচক্রে, সওয়াল-জবাব পর্বেই আদালত জানতে পারে যে ওই স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী প্রয়াত হওয়ায় দৈনন্দিন পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। বিচারপতি সামন্ত রায়ে এই বিষয়টিরও উল্লেখ করেছেন।
দু পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পরে বিচারপতি সামন্তের পর্যবেক্ষণ, বিবাদী পক্ষ যে স্বজনপোষণের অভিযোগ করেছে তার সপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি। জনশিক্ষা অধিকর্তাও কোনও যুক্তি না দেখিয়েই প্যানেল বাতিল করেছেন। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘যুক্তিহীন কোনও নির্দেশ আইনে গ্রাহ্য হতে পারে না।’’