স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। —প্রতীকী চিত্র।
আগের দিনেই ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল' সংস্থার শুধু রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) স্যালাইন নয়, তাদের সরবরাহ করা ১৪ রকম ওষুধ ও স্যালাইনের ব্যবহার নিষিদ্ধ জানিয়ে সরকারি নির্দেশিকা এসেছে। অথচ বুধবার সকালে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওই সংস্থারই সরবরাহ করা ‘নরমাল স্যালাইন’ (এন এস) ব্যবহার হতে দেখা গেল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মেদিনীপুরে প্রসূতি-মৃত্যুর পরেও রবি ও সোমবার যথাক্রমে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল ও নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইন ব্যবহারের কথা জানাজানি হয়েছিল। তখনই জেলার সমস্ত সরকারি হাসপাতালে ওই সংস্থার আরএল স্যালাইন ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সেগুলি 'তালাবন্দি' করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর মঙ্গলবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই সংস্থার তৈরি কোনও কিছুই ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন উঠছে, এত কিছুর পরেও এ দিন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কী ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল ওই স্যালাইন?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল প্রায় ৯টা নাগাদ কুপার্সে নির্মাণ কাজের সময় জখম হন দীপক দে নামে এক জন। স্থানীয়েরাই তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকের পরামর্শে জরুরি বিভাগেই সাধারণ স্যালাইন দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ভর্তি রাখা হয় পুরুষ শল্য চিকিৎসা বিভাগে। সেখানেই কর্মীদের নজরে আসে, জখম ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগ থেকে 'পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল'-এর তৈরি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। কর্তব্যরত নার্সেরা তড়িঘড়ি ওই স্যালাইন বদলে দেন। জরুরি বিভাগ থেকেও সরিয়ে ফেলা হয় মজুত রাখা ওই সংস্থার সমস্ত স্যালাইন।
জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন ওই স্যালাইন আগে সরানো হয়নি?
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী দাবি করেন, "রাজ্যস্তর থেকে নির্দেশিকা আসার আগেই আমরা ওই সংস্থার স্যালাইন ব্যবহার বন্ধ রেখেছিলাম। হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসক ও নার্সিং কর্মীদের বিষয়টি বার বার জানানো হয়েছে। অন্যান্য বিভাগ থেকে আগেই তা সরিয়ে বিকল্প স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও দু'একটি স্যালাইন জরুরি বিভাগে রয়ে গিয়েছিল।"
এ দিন সকালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত নার্সিং কর্মী বলেন, "নির্দেশ ছিল ঠিকই। তবে ওই সংস্থার স্যালাইন যে রয়ে গিয়েছে, তা খেয়াল করিনি।" রোগীর পরিজনেরা জানান, জরুরি বিভাগ থেকে ওই স্যালাইন দেওয়ার মিনিট পনেরো বাদে তা বদলে দেওয়া হয়। সুপার বলেন, "নির্দেশ না মেনে কেন ওই স্যালাইন রোগীকে দেওয়া হয়েছিল, তা জানতে জরুরি বিভাগের নার্সিং কর্মীকে শো-কজ় করা হয়েছে। তবে রোগীর কোনও শারীরিক সমস্যা হয়নি। তিনি সুস্থ রয়েছেন।"