West Bengal Budget 2024-25

একশো দিনের কাজে বকেয়া টাকা মেটাবে রাজ্য, ‘বাড়তি’ বরাদ্দ আসবে কোথা থেকে? নজরে রাজ্য বাজেট

২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার, পড়ুয়া ঋণ-কার্ডের পাশাপাশি নতুন রূপে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল তৃণমূল সরকার। ভোট পরবর্তী বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৬
Share:

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ করবেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

কেন্দ্র না দেওয়ায় রাজ্যে একশো দিনের কাজে মজুরি হিসেবে বকেয়া টাকা তাঁর সরকারই মিটিয়ে দেবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিসাব বলছে, সেই প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে অদক্ষ শ্রমিকদের পাওনা মেটাতেই লাগবে অন্তত ৩০০০ কোটি টাকা। মাথায় বিপুল ঋণের বোঝা থাকা টানাটানির সংসারে এই ‘বাড়তি’ বরাদ্দ আসবে কোথা থেকে, আজ রাজ্য বাজেটে নজর থাকবে সে দিকে।

Advertisement

ঠিক একই ভাবে চোখ থাকবে ভোট-বছরে লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী-সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দের উপরে। আতশকাচের তলায় থাকবে পুঞ্জীভূত ঋণ এবং রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) নিরিখে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণও। মোটের উপরে, ভোট-বছরে কার্যত দড়ির উপরে হেঁটে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ এবং ঘাটতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই আজ রাজ্য বাজেটের (২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের) বড় চ্যালেঞ্জ।

আজ, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দুপুর তিনটে নাগাদ রাজ্য বাজেট পেশ করার কথা অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার, পড়ুয়া ঋণ-কার্ডের পাশাপাশি নতুন রূপে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল তৃণমূল সরকার। ভোট পরবর্তী বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। প্রশাসনিক মহলের সূত্রে খবর, এ বছরও তেমনই এই মুহূর্তে রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দু’টি প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এর মধ্যে একশো দিনের কাজে এক বছরেরও বেশি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ থাকার মোকাবিলায় তার শ্রমিকদের (মূলত অদক্ষ) বকেয়া মজুরি রাজ্যই দেবে বলে ঘোষণা করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। একই অবস্থায় থাকা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়েও ভাবনাচিন্তার কথা বলেছেন তিনি। ইঙ্গিত, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না আসায় বাড়ি তৈরি যাতে আটকে না থাকে, সেই উদ্দেশে ‘প্রাপ্য’ টাকা মিটিয়ে দেবে রাজ্য সরকারই।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে ইঙ্গিত, এই দু’য়ের জন্য (অন্তত প্রথমটির জন্য) বরাদ্দের দেখা মিলতে পারে এ বারের বাজেটে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের প্রশ্ন, মাথায় যেখানে সাড়ে ৬ লক্ষ কোটি টাকা ধারের বোঝা, সেখানে এই বরাদ্দ আসবে কোথা থেকে? তবে কি কোপ পড়বে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে? কারণ, ভোট-বছরে ‘জনপ্রিয়’ সামাজিক প্রকল্পগুলির বরাদ্দ ছাঁটাই বেশ কঠিন বলেই তাঁদের দাবি।

প্রশাসনের দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, নতুন কৃষকবন্ধু এবং পড়ুয়া ঋণ-কার্ডে উপভোক্তার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভান্ডারে প্রায় ১.৯৮ কোটি উপভোক্তা ছিলেন। সরকারি সূত্রে খবর, অগস্ট পর্যন্ত এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এখন উপভোক্তার সংখ্যা দু’কোটি ছাড়িয়েছে। ফলে বাড়ছে খরচ। তার উপরে এই ধরনের প্রকল্পে অন্যান্য রাজ্যে বিভিন্ন দলের আরও বেশি টাকার প্রতিশ্রুতির দরুন ফি মাসে দেয় অঙ্ক ৫০০ ও ১০০০ (জনজাতি মহিলাদের জন্য) টাকার থেকে বাড়ানোর বিষয়ে চাপ রয়েছে। যাঁরা এখনও এই প্রকল্পের আওতায় আসেননি, তাঁদের এই সুবিধা দিতে প্রচার জোরদার করেছে সরকার। ফলে এ ধরনের সামাজিক প্রকল্পে খরচ ছাঁটাই অন্তত এই মুহূর্তে কঠিন। শক্ত এখনই টাকা বাড়ানোও। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু এবং রূপশ্রী প্রকল্পেই খরচ রাজ্যের মোট রাজস্বের প্রায় সাড়ে ৯%। রাজ্যের নিজস্ব আয়ের প্রায় ২৪%।

এ ছাড়া রয়েছে বেতন, পেনশন, পুরনো ঋণ বাবদ সুদ, প্রশাসনিক খরচ, দফতরভিত্তিক বরাদ্দের মতো বাধ্যতামূলক বিভিন্ন খাতের খরচ। আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক প্রকল্প এবং এই সব বাধ্যতামূলক খরচ মেটাতেই চলে যাচ্ছে রাজ্যের প্রায় ৯০% টাকা। তাই সে কথা মাথায় রেখে নতুন প্রতিশ্রুতির দায় ভোট-বছরে সরকার আর নেয় কি না কিংবা তা নিলে টাকার সংস্থান করে কোথা থেকে, বাজেটে সে দিকে চোখ থাকবে সকলের।

আর্থিক পর্যবেক্ষকেদের একাংশের মতে, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের নিজস্ব রাজস্বের তুলনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ-অনুদানের বহর বেড়েছে। রাজ্যের নিজস্ব আয়ের মধ্যে এসজিএসটি, পেট্রোপণ্য (প্রধানত বিক্রয় কর), আবগারি শুল্ক, স্ট্যাম্প-রেজিস্ট্রেশন ডিউটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়তো হবে না। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের বাজেট-প্রস্তাবে বাজার থেকে ধারের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি রেখেছিল সরকার। নতুন বাজেটে সেই পরিমাণ কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়েও আগ্রহ রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

যদিও প্রশাসনের অন্দরের বক্তব্য, ধার কিংবা ঘাটতি আদৌ বেলাগাম নয়। সামাজিক প্রকল্পে টাকা ঢালতে গিয়েছে খরচ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তা বলে মাত্রাছাড়া ঋণ নিয়ে শৃঙ্খলা ভাঙেনি সরকার। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, একে শিল্প না থাকায় রাজ্যের নিজস্ব আয় তলানিতে, তার উপরে নানা ‘ভোটমুখী’ প্রকল্পে টাকা ঢালতে গিয়ে কোষাগারের কার্যত দেউলিয়া দশা করে ছেড়েছে তৃণমূল সরকার।

বাজেটে আজ এ সবেরই উত্তর পাওয়ার দিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement