প্রতীকী ছবি।
আট বছরে তিন বার বিল। সরকারি পদে সরাসরি লোক নিয়োগের সুবিধার্থে স্টাফ সিলেকশন কমিশনের (এসএসসি) জন্য বিল এনে পরে আবার তা বাতিল করেছিল রাজ্য সরকার। দু’বছর আগেকার সেই বাতিল করার আইনকে বাতিল করে এখন এসএসসি-কে ফের জিইয়ে তুলতে বিল আনছে তারা! লোক নিয়োগের পদ্ধতি ঘিরে সরকারের এমন আচরণকে ‘তুঘলকি’ বলেই আখ্যা দিচ্ছে বিরোধীরা।
বিধানসভায় আজ, বৃহস্পতিবারই পেশ হতে চলেছে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টাফ সিলেকশন কমিশন (রিপিলিং) (রিপিলিং) বিল, ২০১৯’। দু’বার প্রত্যাহার বা বাতিলের কথা শিরোনামে রেখে এমন বিল সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। কেন মাত্র দু’বছর আগের আইন বাতিল করে এসএসসি-র পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হচ্ছে, তার ব্যাখ্যায় নতুন বিলে বলা হয়েছে— পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আওতায় নয়, রাজ্য সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানে এমন বেশ কিছু শূন্য পদে অল্প সময়ের মধ্যে কর্মী নিয়োগ করা প্রয়োজন। ‘জনস্বার্থে’ই এই কাজ করতে হবে এবং যথাযথ পরিকাঠামো ও উপকরণ না থাকলে এত সংখ্যায় নিয়োগ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে বিলে বলা হয়েছে। সেই জন্যই এসএসসি-কে আবার জিইয়ে তুলতে হচ্ছে।
পিএসসি-র বাইরেও সরকারি নানা পদে লোক নিয়োগের লক্ষ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালে এসএসসি বিল এনেছিল। সেই প্রয়োজনীয়তা আর নেই বলে কারণে দেখিয়ে ২০১৭ সালে বাতিল করা হয় এসএসসি। এখন আবার ২০১৭-র আইন বাতিল করে এসএসসি-কে ফের বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে নতুন বিলে।
‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টাফ সিলেকশন কমিশন (রিপিলিং) (রিপিলিং) বিল, ২০১৯’।—নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সরকারের বার বার সিদ্ধান্ত বদল তো বটেই, বিল পেশের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিধানসভায় এ দিন অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকে সরকারের তরফে জানানো হয়, আজই এসএসসি সংক্রান্ত বিল পেশ করে এক ঘণ্টা আলোচনা হবে। অথচ তখনও বিলের প্রতিলিপি হাতে পাননি বিরোধী দলনেতা-সহ কোনও বিধায়ক। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী, বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিল দেখার সুযোগটুকুও না দিয়ে এ ভাবে পেশ করার চেষ্টা মানা যায় না।
২০১১ ও ২০১৭ সালের বিল।—নিজস্ব চিত্র।
পরে সুজনবাবু বলেন, ‘‘এক বার পিএসসি-র ক্ষমতা খর্ব করে এসএসসি আনছে, তার পরে সেটা বাতিল করছে। আবার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে এসএসসি-কে ফের সামনে আনছে। কী ভাবে সরকার চলছে, এতেই বোঝা যাচ্ছে!’’ মনোজবাবুর মন্তব্য, ‘‘এক জন মানুষকে মেরে ফেলে আবার তাকে মন্ত্রপড়া জল ছিটিয়ে বাঁচিয়ে তোলার ম্যাজিক দেখেছিলাম! এটাও সে রকম কারবার!’’ আর বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘একে তো সরকার যেমন খুশি, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তার উপরে বিধানসভার মর্যাদা রক্ষার কোনও চেষ্টাই সরকার পক্ষ করছে না। পরের দিন সভায় কী হবে, আগের দিন ঠিক থাকছে না!’’
মান্নান ও সুজনবাবুদের অভিযোগ, অধিবেশনে বিশেষ কোনও কার্যসূচি নেই। তবু বিরোধীদের মুলতুবি প্রস্তাব নেওয়া হচ্ছে না, বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের হুঁশিয়ারি, তাঁরা কাল, শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। সরকারের মনোভাব না বদলালে তাঁরাও বিরোধিতার পথ বদলাবেন।