সব কেন্দ্রের নিরাপত্তা-সহ পরীক্ষার যাবতীয় সুবন্দোবস্ত করতে আগে থেকেই ভাবনাচিন্তা, পদক্ষেপ শুরু করেছিল পর্ষদ। ফাইল চিত্র।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে গণ টোকাটুকির অভিযোগ উঠেছে অনেক বারই। পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরীক্ষাকেন্দ্রকে ঘিরে যে কোনও ধরনের সমস্যার মোকাবিলায় এ বার নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনায় নতুন একটি রিয়েল টাইম অ্যাপের ব্যবহার করবে তারা।
২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ লক্ষের বেশি। সব কেন্দ্রের নিরাপত্তা-সহ পরীক্ষার যাবতীয় সুবন্দোবস্ত করতে আগে থেকেই ভাবনাচিন্তা, পদক্ষেপ শুরু করেছিল পর্ষদ। সেই পদক্ষেপেরই অন্যতম এই নতুন অ্যাপ। অ্যাপটির মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতরে বসেই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির উপরে নজরদারি করা যাবে।
পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ। সোমবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন ডেপুটি সেক্রেটারি (পরীক্ষা) মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় (ভদ্র)। পরীক্ষার দায়িত্বে যাঁরা থাকছেন, তাঁরা নিজেদের মোবাইলে অ্যাপটি ডাউনলোড করে যাবতীয় তথ্য সরাসরি পর্ষদ কর্তাদের জানাতে পারবেন। এর ফলে পর্ষদ সহজেই বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক এলাকায় থাকা স্কুলগুলিতেও ঘটতে থাকা যে কোনও ঘটনা সহজে এবং দ্রুত জানতে পারবেন। পর্ষদ কর্তারা মনে করছেন, প্রশ্ন ফাঁস বা টোকাটুকির মতো ঘটনা আটকাতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকরী হবে।
পর্ষদের বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত চার ধরনের দায়িত্বে থাকা কর্তাদের জন্য। মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা আঞ্চলিক আধিকারিক, জেলার আহ্বায়ক, সেন্টার সেক্রেটারি এবং ভেনু সুপারভাইজারদের জন্য এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উচ্চতর দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিষয়টি বোঝানো হবে। ধাপে ধাপে সব দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদেরই অ্যাপ সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত করানো হবে। ১৭-১৯ ফেব্রুয়ারি অ্যাপটি পরিচালন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হাতে-কলমে শেখানো হবে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নতুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পরিবর্তনের সরকারের জমানায় গণ টুকাটুকির মতো ঘটনা ঘটেনি। প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তা-ও পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পরে। সব দিক থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে গত কয়েক বছরে রাজ্যের মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল। এ বার নতুন এই পদ্ধতি চালু হলে মাধ্যমিক পরীক্ষা আরও বেশি ত্রুটিমুক্ত হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।’’ তবে নতুন পদ্ধতি নিয়ে সংশয় রয়েছে অন্য শিক্ষক সংগঠনের। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় যখন পর্ষদ সভাপতি ছিলেন, তখন পরীক্ষার সময় নানা প্রযুক্তির ব্যবহার করে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এক বার তো বলেছিলেন প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে চিপ লাগানো হচ্ছে। যাতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা সহজে রোখা যায়। সে বার আবার পর পর পাঁচ দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। আবারও নতুন প্রযুক্তি কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’’