গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলকে ‘মেসির টিম’ বলে উল্লেখ করে রাজ্য বিজেপি-র ক্ষমতাসীনদের আক্রমণ করলেন বিদ্রোহী জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারিরা। দাবি করলেন, বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বের তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ের শক্তি নেই। তার জবাবে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মনে করালেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরের কথা। মনে করালেন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী ভাবে জ্বলে উঠেছিলেন ১৭ বছরের কম বয়সের এক কিশোর।
প্রথমে দলবিরোধী মন্তব্যের জন্য কারণ দর্শানোর চিঠি এবং তার পর পরই রাজ্য বিজেপি সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে জয়প্রকাশ ও রীতেশকে। সোমবার সেই ঘোষণার পরে মঙ্গলবারই কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে জয়প্রকাশ-রীতেশ জুটি। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চুপ থাকা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাচের ঘরে বসে অন্যদের ঢিল মারার নীতি উল্লেখ করে আক্রমণ শানান তাঁরা। বলেন, ‘‘বঙ্গ বিজেপি-র দায়িত্ব এখন যাঁদের কাঁধে, তাঁদের প্রথম জন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মাত্র আড়াই বছর রাজনীতি করছেন। আর দ্বিতীয় জন অর্থাৎ সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী বাংলায় রাজনীতি করছেন মাত্র দু’বছর। অর্থাৎ বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ দুই নেতার সম্মিলিত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দু’বছরের। ওই পাঁচ বছরেরও কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মাথারা লড়াই করছে কার বিরুদ্ধে, যিনি কি না এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম স্ট্র্যাটেজিস্ট ও কুশলী নেত্রী। আমরা তাঁকে না পছন্দ করতে পারি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, আন্দোলনের অভিজ্ঞতা দীর্ঘকালীন।’’
এ প্রসঙ্গেই জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দীর্ঘ দিন আন্দোলন করে আসা অভিজ্ঞ নেত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপি-র মুখ কি না যৌথ ভাবে পাঁচ বছরেও কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দুই নেতা! এ তো মেসির টিমের বিরুদ্ধে তিন দিনের অনুশীলনে খেলতে নামা প্লেয়ার।’’ এর জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘যাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, তাঁরা এখন আমাদের দলের কেউ নন। তবে আমি মনে করাতে চাই সেই ১৭ বছরের কিশোরের কথা, যিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ঝড় দেখিয়েছিলেন।’’
অভিজ্ঞ ও জাতীয় স্তরে কুশলী রাজনীতিক হিসেবে খ্যাত বলা ছাড়াও আরও অনেক বিষয়েই মমতার প্রশংসা করেন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালি অস্মিতাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ এই স্লোগান তুলে তৃণমূল বাঙালি অস্মিতাকে কাজে লাগিয়েছে ভোটে। বিজেপি বাঙালি অস্মিতার ধার-কাছ দিয়েও যায়নি। তারা ভিন্রাজ্য থেকে নেতাদের এনে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন শুধু। তাই যা ফল হওয়ার তাই হয়েছে। হিন্দি ভাষায় বাংলার ভোট পরিচালনার ফলও ভোগ করতে হয়েছে রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের।’’ তৃণমূলের বহিরাগত তত্ত্বকে কার্যত মেনে নিয়ে আক্রমণ চালান জয়প্রকাশরা।
বিরোধী রাজনীতি কেমন ভাবে করা উচিত তা মমতার থেকে শেখা উচিত বলেও বিজেপি-কে আক্রমণ করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি কর্মীদের অসহায়তার কথা উল্লেখ করে জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘বাংলার বিজেপি শুধুই আদালত নির্ভর। আর মমতা যখন বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, তখন মাঠে ময়দানে ছিলেন। তিনি কখনও আদালতের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকেননি।’’
এ সব বিষয়ের জবাব দিতে চাননি সুকান্ত। তবে দলের বিরুদ্ধে এমন সাংবাদিক বৈঠকের পরে কি সাময়িক বরখাস্ত জয়প্রকাশ, রীতেশদের বিরুদ্ধে কোনও পাকাপাকি শাস্তির বিধান দেওয়া হবে? সুকান্ত বলেন, ‘‘সেটা সময় হলেও জানিয়ে দেওয়া হবে।’’