বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি দলের পাশে থাকবে রাজ্য বিজেপি। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছে রাজ্য বিজেপি। এ নিয়ে দলের তরফে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি পাঠিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরাও আসেন বাংলায়। আদালতেও গিয়েছে বিজেপি। হাই কোর্টের নির্দেশে চলছে সিবিআই তদন্ত। এর পরেও রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা আসছেন রাজ্যে। ওই দলের হাতে বাংলায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা নজির তুলে দিতে চায় রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ওই দলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতেই ওই দল কলকাতায় চলে আসতে পারে। ফিরে যাবে বৃহস্পতিবার রাতে। এই দু’দিনে প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-য় পাশ করা চাকরিপ্রার্থী থেকে আইনি বাধার মুখে পড়া ব্লগার ও ইউটিউবারদের সঙ্গেও কথা বলবেন ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা। ‘লইয়ার্স ফর জাস্টিস’ নামে ওই সংগঠনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন প্রাক্তন বিচারপতি এল নরসিংহ রেড্ডি, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার রাজপাল সিংহ, মহিলাদের অধিকার সংক্রান্ত কাজ করা আইনজীবী চারু ওয়ালি খান্না, সাংবাদিক সঞ্জীব নায়ক এবং দুই আইনজীবী ওমপ্রকাশ ব্যাস এবং রোজি তাবা।
ওই দলকে সাহায্য করার জন্য রাজ্য বিজেপিও একটি কমিটি তৈরি করেছে। সুকান্ত মজুমদারের তৈরি করা ওই কমিটিতে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী, দুই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ এবং আরকে হান্ডা। রয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সংগঠনের পক্ষে তিন নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, মধুছন্দা কর এবং শিশির বাজোরিয়া।
রাজ্য বিজেপি অবশ্য এই সংস্থার সঙ্গে দলের যোগাযোগ স্বীকার করেনি। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি মধুছন্দা বলেন, ‘‘এই রাজ্যে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে। এ নিয়ে আমরা লাগাতার আন্দোলন করে চলেছি। একই লক্ষ্যে একটি দল সত্য জানতে বাংলায় আসছে। তাদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। সেই কারণেই রাজ্য সভাপতি একটি দল গড়ে দিয়েছেন।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার কলকাতায় ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশনস’ (আইসিসিআর)-এ ওই তথ্য অনুসন্ধান দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের এমন মানুষদের নিয়ে আসা হবে, যাঁরা নানা বিষয়ে ‘বঞ্চিত’ বলে অভিযোগ। সেখানে যেমন স্কুলের চাকরিপ্রার্থীদের আনা হবে তেমনই সরকারি কর্মীদেরও আনা হবে। রাজ্য সরকারের অধীনে কর্মরত যে সব চিকিৎসক বিভিন্ন সময়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদেরও তথ্য জানানোর জন্য বুধবার প্রতিনিধি দলের কাছে হাজির করানো হবে। এ ছাড়াও সমাজমাধ্যমে লেখালিখির জন্য যাঁরা প্রশাসনিক বাধার মুখে পড়েছেন তাঁদেরও ডাকা হতে পারে। বৃহস্পতিবার ওই প্রতিনিধি দল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সরকারি কর্তাদের সঙ্গেও দেখা করতে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারি অনুমতি নিয়ে যাবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
জানুয়ারিতে শুরু করে আগামী কয়েক মাস নিয়মিত ওই বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা রাজ্যে আসবেন। কথা বলবেন বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে। কেন এই উদ্যোগ? রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন। অনেকেই শাসক দলের এবং সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। আমরা চাই অন্য রাজ্যের মানুষেরাও জানুন বাংলায় ঠিক কী কী হচ্ছে। সেই কারণেই এই সংগঠনের পাশে আমরা থাকতে চাই।’’