দীর্ঘ উদ্বেগের পরে ঘরে ফেরা। নিজস্ব চিত্র
ইউক্রেন থেকে ঘরে ফেরা বাংলার পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। ঠিক হয়েছে কেন্দ্রের থেকে তালিকা জোগাড় করে এখনও ইউক্রেনে আটকে থাকাদের পরিবারের সঙ্গেও দলের পক্ষে যোগাযোগ করা হবে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে দলের নেতারা শুরু করছেন এই জনসংযোগ কর্মসূচি। ইতিমধ্যেই দিল্লির থেকে পাওয়া যে তালিকা রাজ্য বিজেপি-র হাতে এসেছে, তাতে ৩৬৪ জনের নাম রয়েছে।
এই কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছেন দলের অন্যতম সহ-সভাপতি মধুছন্দা কর। পেশায় চিকিৎসক মধুছন্দা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি নিজেও অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে বুঝতে পারছি, এই মানুষগুলোর পাশে এখনই দাঁড়ানো উচিত। তাঁদের পাশে যে সবাই রয়েছে সেই আশ্বাস দেওয়া উচিত। যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁরা এখনও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছেন। আর যাঁরা এখনও ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন কিংবা রোমানিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন, তাঁদের পরিবারের লোকেরাও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাইছি।’’
বাড়ি বাড়ি গিয়ে কী বলবেন বিজেপি নেতারা? জবাবে মধুছন্দা বলেন, ‘‘ওঁদের যা মানসিক অবস্থা, তাতে কথা বলাটাই অনেক বড় শুশ্রূষা। একটু কথা বললে, পাশে থাকার আশ্বাস দিলে তাঁদের উদ্বেগ অনেকটা কমানো যাবে। একই সঙ্গে বিজেপি যেহেতু কেন্দ্রের শাসক দল, তাই ওঁরা আমাদের উপরে ভরসা করছেন। চাইছেন আমাদের জনপ্রতিনিধিরা ওঁদের কাছে যান। ফোনে কথা হলে সকালে তেমন বলছেন। যাঁরা এখনও আটকে, তাঁদের পরিস্থিতি আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের লোকেদের জানানোর চেষ্টাও করব।’’ ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘অপারেশন গঙ্গা’ নামে উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাতে সাফল্য মিলছে বলে দাবি করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ইউক্রেন থেকে ফেরা পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কি রাজনৈতিক প্রচার চাইছে বিজেপি? মধুছন্দা বলেন, ‘‘না। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি খুঁজবেন না। প্রচার না চেয়ে আমরা চুপিচুপি কাজ শুরু করেছি। এটা শুধু পাশে থাকার কর্মসূচি। কেমন কষ্টে কেটেছে দিন, কেমন ভাবে ফিরলেন, ভারতীয় দূতাবাসের ভূমিকা কেমন ছিল এ সব কথা শুনব আমরা। ওঁরা এগুলো বলতে পেরে স্বস্তি বোধ করবেন।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলার এই সব পড়ুয়া এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রাজ্য দফতর থেকে ফোন করাও শুরু হয়েছে। এর জন্য তৈরি হয়েছে একটি কলসেন্টার। পড়ুয়া বা তাঁদের পরিবার যদি নিজেদের জন্য যোগাযোগ করতে চান, তার জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বরও ঠিক হয়েছে। মধুছন্দা জানিয়েছেন, কোন জেলায় কতজন রয়েছেন তার তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাজ্য দফতর থেকে প্রথম দফায় ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ বার দলের রাজ্য নেতা থেকে বিধায়ক, সাংসদরা বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করবেন। কে কবে কোথায় যাবেন, সেই মতো দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হবে। সেই মতো কাজ চলবে। তবে প্রস্তুতির জন্য সময় নষ্ট না করে ইতিমধ্যেই কয়েকজন নেতা যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী বুধবার তাঁর লোকসভা এলাকার গোয়ালপোখর থেকে ইউক্রেনে সন্তানদের ডাক্তারি পড়তে পাঠানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শুক্রবার হুগলির চন্দননগরের একটি পরিবারে যাওয়ার কথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং পুড়শুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের। এ ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য বিধায়ক, সাংসদরা কবে কোথায় যাবেন, তা খুব তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মধুছন্দা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সকলের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার মতো জনপ্রতিনিধি আমাদের নেই। তাই আমরা প্রাথমিক ভাবে নিয়মিত টেলিফোনে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছি। প্রতি মুহূর্তের সুবিধা, অসুবিধার কথাও আমরা শুনছি। প্রয়োজন মতো সাহায্যের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’