সুকান্ত মজুমদার।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকলেও রাজ্য বিজেপি এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী লোকসভায় ১৮ আসন ধরে রাখা যে সহজ হবে না, সেটা বুঝছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও। তাই এ বার দলের সাংগঠনিক কাঠামোতেই বড় বদল আনতে চায় দল। গুজরাতের মতো যে সব রাজ্যে বিজেপির সংগঠন মজবুত, সেখানকার অনুকরণেই বাংলাতেও দলকে সাজাতে চায় গেরুয়া শিবির। তাতেই ঠিক হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রামে ‘অঞ্চল কমিটি’ ও শহরে ‘ওয়ার্ড কমিটি’ তৈরি করবে বিজেপি। একই সঙ্গে ব্লক স্তরেও একটি করে কমিটি রাখবে দল।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তার এক মাসের মধ্যে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বাংলা সফরে এসেছিলেন। রাজ্যে আসেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ। সকলেই বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আরও বেশি কর্মী, নেতাকে সংগঠনের ভিতরে নিয়ে আসার কথা বলেন। তাতেই উঠে আসে সাংগঠনিক ভাবে বিজেপি সফল হয়েছে এমন সব রাজ্যের কথা। শাহ গুজরাতে এবং উত্তরপ্রদেশে নিজে হাতে সাজিয়েছিলেন সংগঠন। সেই সব উদাহরণ নিয়েও জুনের প্রথম সপ্তাহে নড্ডার সফরের সময়ে রাজ্য নেতাদের নিয়ে আলোচনা করেন সন্তোষ। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, আরও দু’টি স্তরে কমিটি গঠন করে সংগঠন মজুবতের চেষ্টা করবেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
এখন রাজ্য বিজেপিতে বুথের উপরেই রয়েছে শক্তিকেন্দ্র ও মণ্ডল কমিটি। তার উপরে জেলা কমিটি। এখন এর মাঝে আরও দু’টি স্তর তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। রাজ্য বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, বাংলায় বুথ কমিটি রয়েছে মোটামুটি ৭০ হাজারের মতো। বাংলায় সাতটি বুথ নিয়ে হয় একটি শক্তিকেন্দ্র। এর উপরেই মণ্ডল কমিটি। এখন লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে মণ্ডল কমিটির নীচে থাকবে অঞ্চল কমিটি। পুরসভা এলাকায় যার নাম হবে ওয়ার্ড কমিটি। মণ্ডল কমিটির উপরে রয়েছে লোকসভা কেন্দ্র অনুসারে ৪২টি জেলা কমিটি। নতুন পরিকল্পনায় জেলা কমিটির নীচে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ৩৪১টি কমিটি তৈরি করা হবে। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বুথ, মণ্ডল, জেলা এবং রাজ্য কমিটির সভাপতি পদ ঠিক হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে অঞ্চল, ওয়ার্ড, ব্লক কমিটি তৈরি হলেও সেটা হবে মনোনয়নের মাধ্যমে। সভাপতির পরিবর্তে এই কমিটিগুলির মাথায় আহ্বায়ক (কনভেনার) থাকবেন।
গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ-সহ যে সব রাজ্যে বিজেপির সংগঠন শক্তিশালী সেখানে বুথ কমিটির নীচেও থাকে পন্না (পৃষ্ঠা) প্রমুখ পদ। প্রতিটি বুথের ভোটার তালিকায় যতগুলি পৃষ্ঠা থাকে তত জন প্রমুখ রাখা হয়। তাঁদের দায়িত্ব থাকে ওই পৃষ্ঠায় নাম থাকা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। ওই সব পরিবারের সঙ্গে দলের সেতুর কাজ করেন ওই কর্মীরা। বাংলায় অবশ্য এখনই সেই মডেল অনুকরণের লক্ষ্য নেই বলেই জানা গিয়েছে।
এই কমিটি গঠনের পিছনে বিজেপির অন্য লক্ষ্য রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। দলের সংবিধানে যে গঠনতন্ত্র রয়েছে তাতে কোন কমিটিতে সর্বোচ্চ কত জন সদস্য থাকতে পারেন, তার মধ্যে কত জন মহিলা, কত জন সংরক্ষিত জাতি, জনজাতির তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে। বিজেপির হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ বড় রাজ্যের আওতায় পড়লেও একটি মণ্ডল কমিটিতে ৬০ জনের বেশি সদস্য রাখা যায় না। একই ভাবে জেলা কমিটিতে সর্বোচ্চ ৯০ জন সদস্য থাকতে পারেন। রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘অতীতের তুলনায় দলের কর্মী সংখ্যা গত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। অনেকেই কোনও কমিটিতে থাকতে চান, কিন্তু সুযোগ দেওয়া যায় না। এখন আরও বেশি কমিটি হলে আগ্রহীদের সবাইকেই কোথাও না কোথাও জায়গা দেওয়া যাবে।’’ জেলা থেকে মণ্ডল স্তরের কমিটিতে নিজেদের ঘনিষ্ঠেরা জায়গা পাননি বলে দলের অনেক পদাধিকারীর মনেও ক্ষোভ রয়েছে। নতুন স্তরের কমিটি তৈরি হলে সেই ক্ষোভও অনেকটা কমানো যাবে বলেও মনে করছে গেরুয়া শিবিরে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের ভাল ফল না হওয়ায় অনেকেই বুথ স্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন। এখনও বিজেপি সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে নতুন দু’টি স্তরের কমিটি গঠন কি আদৌ সহজ হবে? দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য বুথ কমিটি গঠন। এর পরে মণ্ডল কমিটি তৈরি। যে কাজ প্রায় হয়ে এসেছে। যেটুকু বাকি রয়েছে তা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। এর পরে বাকিটাও আমরা করে ফেলব।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কি নতুন দু’টি স্তর সংগঠনে দেখা যাবে? সুকান্ত বলেন, ‘‘এখনই কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেওয়া হয়নি। নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে দেব।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।