উত্তর কলকাতার মুরলীধর সেন লেনের বাড়ির বদলে রাজ্য দফতরের নতুন ঠিকানা চায় রাজ্য বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে এই বাড়িকে ব্রাত্য করে কলকাতার দক্ষিণের হেস্টিংস মোড়ের কাছে ‘অগ্রবাল হাউস’-কে ঠিকানা করেছিল বিজেপি। এখন দলে সেই বাড়ির গুরুত্বও কমে গিয়েছে। ভোটে ভাল ফল না হওয়ার পরে ভাড়া নেওয়া অনেকগুলি তলা ছেড়েও দিয়েছে বিজেপি। এখন রাজ্য বিজেপির পরিকল্পনা, হেস্টিংসের দফতর পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে। বর্তমান রাজ্য দফতর আগামী দিনে হয়ে যাবে উত্তর কলকাতা জেলার কার্যালয়। আর রাজ্য দফতর হবে নতুন কোনও ঠিকানায়। বিজেপি সূত্রে খবর, নতুন দফতর নেওয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছাড়পত্র মিলেছে। এখন খোঁজ শুরু হবে, কোথায় নতুন দফতর বানানো যায়। বিস্তারিত না জানালেও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘দল বড় হচ্ছে, তাই রাজ্য দফতর বড় হওয়া দরকার। কবে, কোথায়, কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও আমরা ভাবতে শুরু করেছি।’’
৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের পুরনো ভাড়াটিয়া বিজেপি। দলের নেতারা বলেন, বিজেপির আদিপুরুষ তথা জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও এক সময় এই দফতরে বসেছেন। এই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার ভাবনা বিজেপিতে নতুন নয়। তবে দলের একাংশের বরাবরের বক্তব্য ছিল, ওই ছোট দফতর থেকেই বড় হয়েছে বিজেপি। তাই সেটা ছাড়া ঠিক হবে না। সেটিকে রেখেই আকারে বড় দফতর বানানোর উদ্যোগ মূলত শুরু হয় বাংলার পর্যবেক্ষক হিসাবে কৈলাস বিজয়বর্গীয় দায়িত্ব নেওয়ার পরে। সেই সময়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সদর দফতরের পাশে ১২ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের একটি বড় বাড়ি কিনে নেবে বিজেপি। কিন্তু ওই বাড়িটি ঘিরে নানা শরিকি গোলমাল থাকায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পুরনো দফতর থেকেই ২০১৬ সালের বিধানসভা এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পরিচালনা করে গেরুয়াবাহিনী। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেকটাই ‘ব্রাত্য’ হয়ে যায় ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দফতর। শুধুই কলকাতা জোনের নির্বাচনী কার্যালয় হয়ে যায়। বাকি সবই হয় হেস্টিংসের অফিস থেকেই।
হেস্টিংসের দফতর পাকাপাকি ভাবে ছেড়ে দিতে চায় রাজ্য বিজেপি।
২ নম্বর সেন্ট জর্জেস গেট রোডে ১০ তলা বাড়ির বেশ কয়েকটি তল ভাড়া নেয় বিজেপি। তার অনেকগুলি ছেড়ে দিলেও এখনও পাঁচ তলায় হলঘরটি রয়েছে। এ ছাড়াও ন’তলায় বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘর রয়েছে। তবে ইদানীং সেখানে খুব বেশি কেউ যান না। সুকান্ত মজুমদার সভাপতি হওয়ার পরে সেখানে আলাদা করে নিজের জন্য কোনও ঘরও বানাননি। এখন কোনও বড় বৈঠক হলেই হেস্টিংস অফিসকে বাছা হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, নতুন ঠিকানা তৈরি করতে সময় লাগলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হেস্টিংসের ভাড়া নেওয়া দু’টি তলাই ছেড়ে দিতে চাইছে দল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে জয়ের পরে জেলায় জেলায় বিজেপি দফতরে অনেক বদল এসেছে। কিন্তু তুলনায় রাজ্য দফতরের আয়তন অনেকটাই ছোট। এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘বাইরে থেকে অনেক কর্মী আসেন। সংবাদমাধ্যমের ভিড়ও লেগেই থাকে। কিন্তু স্থান সঙ্কুলান হয় না। যুব মোর্চা বা মহিলা মোর্চার কাজ চালাতে হয় একেবারে ছোট দু’টি ঘরে। পদাধিকারিদের ঘরগুলিও ছোট ছোট। তাঁদের সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে আসেন তাঁদের অপেক্ষা করার জায়গাও নেই। সব মিলিয়ে খুবই সমস্যা। তাই দফতর বদল খুবই জরুরি।’’ মুরলীধর সেন লেন আসলে একটা সরু গলি হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতারা কলকাতায় এলেও রাজ্য দফতরে আসতে পারেন না। মে মাসেই ওই দফতরে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। শেষ পর্যন্ত তিনি অন্য কর্মসূচির জন্য আসতে পারেননি। তবে বিজেপি সূত্রে জানা যায়,শাহর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসাররাও রাজ্য দফতরে যাওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন।
বৃহস্পতিবারই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সুকান্ত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকেই নতুন রাজ্য দফতর নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেও নতুন বাড়ি ভাড়া বা নির্মাণের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।