শান্তনুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় গেরুয়া শিবির। —ফাইল চিত্র।
বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর কি দলে থাকবেন! উদ্বেগে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। এনআরসি-সিএএ চালু করা নিয়ে ইদানীং শান্তনু প্রকাশ্যেই তাঁর ক্ষোভের কথা বলতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই একবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেছেন। তখনকার মতো শান্ত হলেও আবার প্রকাশ্যে ক্ষোভের কথা বলতে শুরু করেছেন শান্তনু। সুযোগ বুঝে তৃণমূলও এই সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শান্তনুকে দলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন। বিজেপি-র শঙ্কা— মরিয়া শান্তনু না বিধানসভা ভোটের আগে সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বসেন! তা হলে বিজেপি-র মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক তছনছ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা।
শান্তনুর ক্ষোভ নাগরিকত্ব আইন চালু না-হওয়া নিয়ে। কারণ, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি বনগাঁ লোকসভার ভোট জিতেছিলেন। কিন্তু ভোটের পর দেড়বছর কেটে গেলেও কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। তাতেই বিপাকে পড়েছেন শান্তনু। দলের অন্দরে তাঁর হিতৈষী এক নেতার কথায়, ‘‘ও বেচারা এখন মতুয়াদের কাছে মুখ দেখাতে পারছে না!’’
সেই পরিস্থিতিতেই প্রথমবার মুখ খুলেছিলেন শান্তনু। তাঁর ক্ষোভের আঁচ পেয়ে কৈলাস তাঁর বাড়িতে যান। তিনি শান্তনুকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, জানুয়ারী মাসে নতুন নাগরিকত্ব চালু করা হবে। সেই আশ্বাস পেয়ে তখনকার মতো শান্ত হয়েছিলেন শান্তনু। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যসফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, কোভিডের টিকাকরণ শুরু হওয়ার পরেই এনআরসি চালু করার কথা ভাববে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে আবার গোসা হয়েছে শান্তনুর। কারণ, কোভিডের টিকাকরণ কবে চালু হবে, তার কোনও দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তা ছাড়া, কোভিডের টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাওয়ামাত্রই যে ঝপ করে নাগরিকত্ব আইন চালু হয়ে যাবে, তেমন আশাও নেই। সবমিলিয়ে বিপন্নতা বাড়ছে শান্তনুর। পাশাপাশিই, দলের তরফে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে যে ব্যবহারিক সহায়তা দেওয়া হত, তা-ও আগের মতো দেওয়া হচ্ছে না বলে শান্তনুর অভিযোগ। ফলে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিজেপি-র। দলের একটা অংশের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে শান্তনু দুম করে দল না ছেড়ে বসেন!
আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে মোদীর আক্রমণ মমতাকে, পাল্টা আক্রমণে তৃণমূল
আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: শনিবার কলকাতায় শুভেন্দু, নবাগতদের নিয়ে বৈঠক রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের
তবে বিজেপি-র অন্য একাংশের দাবি, তেমন কোনও আশঙ্কা নেই। এক নেতার কথায়, ‘‘শান্তনু কৈলাস’জির হাত ধরেই দলে এসেছিলেন। ফলে কৈলাস’জিই ওঁর বিষয়টা দেখছেন। আলোচনায় ঠিক হয়েছে, আপাতত উনি দলবিরোধী কোনও কথা বলবেন না। কিন্তু পাশাপাশিই ওঁকে মতুয়াদের পক্ষেও বলতে হবে। নইলে এলাকায় ওঁর বিশ্বাসযোগ্যতা বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।’’ রাজ্য বিজেপি-র অপর এক প্রথমসারির নেতা জানান, শান্তনু তাঁর ‘পছন্দের প্রার্থী’-দের জন্য বিধানসভা ভোটের টিকিট দাবি করেছিলেন। সেই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে তাঁকে দলের তরফে জানানো হয়েছে। ওই নেতার কথায়, ‘‘আপাতত শান্তনুকে এইসমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এ ভাবে কতদিন ঠেকানো যাবে, তা বলা কঠিন। মতুয়াদের ভোট শুধু বনগাঁ নয়, রাজ্যের আরও কিছু জেলায় ফ্যাক্টর। ফলে ওই জনগোষ্ঠীর ক্ষোভের বিষয়টাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শান্তনু যা বলছেন, তাতেও যুক্তি আছে। দল দু’টি বিষয়ই মাথায় রেখে এগোচ্ছে। আমাদের আশা, শান্তনু দল ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার মতো কোনও হঠকারী পদক্ষেপ নেবেন না।’’