জানুয়ারির শুরুতেই হবে কমিটি গঠন। পরিকল্পনা শুভেন্দু, সুকান্তদের। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য অনুযায়ী এ বার রাজ্য বিজেপি বাংলায় ৩৫ আসনে জয়ের জন্য ঝাঁপাচ্ছে। সেই লক্ষ্য সংগঠন মজবুত করার পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালন কমিটির বিকেন্দ্রীকরণের কথাও ভেবেছে কেন্দ্রের শাসকদল। তারা ঠিক করেছে, রাজ্যের কমিটি ছাড়াও প্রতিটি লোকসভা এলাকায় হবে একটি করে কমিটি। এর নীচে বিধানসভা অনুযায়ী একটি করে নির্বাচন পরিচালন কমিটি তৈরি করা হবে। অর্থাৎ মোট কমিটি হবে ৩৩৭টি। তাতে অনেক নেতাকে যেমন জায়গা দেওয়া যাবে, তেমনই দায়িত্বও ছড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ থাকবে। অতীতে এ ভাবে কমিটি গড়তে দেখা যায়নি রাজ্য বিজেপিকে। এ বারের যা পরিকল্পনা, তাতে রাজ্যের কমিটি সরাসরি লোকসভা এলাকার কমিটিকে নির্দেশ দেবে। সেখান থেকে নির্দেশ যাবে বিধানসভা স্তরের কমিটির কাছে।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও একটি বড় বদল আনতে পারে বিজেপি। বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৪৩। সব লোকসভা এলাকাকে একটি করে ‘জেলা’ ধরা হয়। তবে দার্জিলিং কেন্দ্রের ক্ষেত্রে পাহাড় ও সমতল আলাদা জেলা। অনেক জেলাতেই আলাদা দু’টি পদ রয়েছে। এক জন জেলা ইনচার্জ এবং এক জন লোকসভা ইনচার্জ। বিজেপির সাংগঠনিক নিয়মে ইনচার্জেরা সব সময়েই অন্য জেলার বাসিন্দা হয়ে থাকেন। তাঁরা নিজের জেলার বাইরে অন্য একটি জেলা বা লোকসভা এলাকা পর্যবেক্ষণের কাজ করেন। আপাতত রাজ্য বিজেপি এই দু’টি পদকে মিলিয়ে দিতে চাইছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রত্যেক জেলায় এক জনই ইনচার্জ রাখা হবে। তিনিই হবেন লোকসভার ‘পর্যবেক্ষক’। সেই তালিকা জানুয়ারি মাসের গোড়াতেই প্রকাশিত হতে পারে। সেই সঙ্গে ঠিক হয়েছে সব লোকসভা এলাকাতেই যে জেলা দফতর রয়েছে, সেটিই হয়ে যাবে নির্বাচনী দফতর। যে সব জেলায় এমন দফতর নেই, সেখানে শীঘ্রই কোনও স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করা হবে।
লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি দেখতে গত মঙ্গলবার রাজ্যে এসেছিলেন বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা। সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুই নেতার উপস্থিতিতে কলকাতায় দফায় দফায় বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্যের সংগঠনে সরাসরি যুক্তদেরই ডাকা হয়েছিল। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত চার কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও ছিলেন দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এবং দিলীপ ঘোষ। সেই বৈঠকের মধ্যেই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, শাহ-নড্ডা রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গড়ে দিয়েছেন। বলা হয়, ১৫ জনের কমিটিতে জায়গা পাননি রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া চার সাংসদ। সে খবর নিয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যেও নানা জল্পনা শুরু হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য মঙ্গলবারই জানিয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনের জন্য আদৌ কোনও কমিটি গড়েননি শাহ-নড্ডা। পরে রাতে যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত একটি বিবৃতিও দেন। শাহ-নড্ডা দিল্লি ফিরে যাওয়ার পর সুকান্ত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘রাজ্যের নির্বাচনী কোনও কমিটি তৈরি হয়নি। রাজ্যের নির্বাচনী কমিটিতে রাষ্ট্রীয় সভাপতির নাম থাকে না। এটুকু সাধারণ জ্ঞান (কমন সেন্স) থাকা উচিত।’’
তবে সেই বিবৃতিতেও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে জল্পনা রয়ে গিয়েছিল। অবশেষে বুধবার কলকাতার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর)-এ দলের বর্ধিত কার্যকারিণী সভায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনী কমিটি গঠনের বিষয়ে দলের কী কী পরিকল্পনা রয়েছে। জানানো হয়েছে কমিটি ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখও। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই কমিটি গঠনের কাজ শুরু করে দেবেন রাজ্য নেতৃত্ব। আর রাজ্য স্তরের কমিটি ঘোষণা হতে পারে ৯ জানুয়ারি। তবে সেই কমিটিতে কাদের রাখা হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিত দেননি নেতারা।