প্রতীকী ছবি।
আশঙ্কা ছিল। আশাও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাই সত্যি হল! আশা পূরণ হল না। কালাজ্বর নির্মূল প্রকল্পের আওতায় একটি স্বাধীন মূল্যায়ন কর্মসূচির শরিকই হল না পশ্চিমবঙ্গ।
পরজীবীবাহিত রোগ কালাজ্বর হয় বেলেমাছির কামড়ে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন এনভিবিডিসিপি বা ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর তত্ত্বাবধানে এই রোগ নির্মূল কর্মসূচির সূচনা হয় ২০০৩ সালে। এ দেশে মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ এবং তার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের ৫৪টি জেলা কালাজ্বরপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে কালাজ্বর নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সেই পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজ কতটা এগিয়েছে, তা যাচাইয়ের জন্য সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় একটি স্বাধীন মূল্যায়ন কর্মসূচির আয়োজন করেছিল এনভিবিডিসিপি। সেই কর্মসূচির দু’টি পর্ব। পরিদর্শন ও আলোচনা। পরিদর্শনের জন্য গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের ১২ জন বিশেষজ্ঞের একটি দলের এ রাজ্যে আসার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী চলছিল প্রস্তুতি। তবে সব মসৃণ ভাবে চললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের আশঙ্কা ছিল, ওই পরিদর্শন না-ও হতে পারে। এবং সত্যি হল সেই আশঙ্কাই! স্বাস্থ্য ভবনের যে এই পরিদর্শনে সায় নেই, একেবারে শেষ মুহূর্তে দিল্লি দরবারে পরোক্ষে সেই বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আচমকা মত বদল কেন? মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাব্যক্তিরা। স্বাস্থ্য প্রশাসনের কোনও স্তরেই এই বিষয়ে খুব বেশি শব্দ খরচ করা হচ্ছে না। আধিকারিকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, ডেঙ্গি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে। এ ক্ষেত্রেও বিষয়টির সঙ্গে দিল্লি-যোগই ওই পরিদর্শনে সায় না-দেওয়ার কারণ হতে পারে। বস্তুত, পরিদর্শন ভেস্তে যাওয়ায় আফসোস যাচ্ছে না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, রোগ নির্মূল কর্মসূচির আদর্শ মাপকাঠি হল, প্রতি দশ হাজার জনসংখ্যায় আক্রান্তের সংখ্যা একের নীচে নামিয়ে আনা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার বা ঝাড়খণ্ড এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে না-পারলেও বাংলা পেরেছে।
পরিদর্শনের অনুমতি পেলে বাংলার সাফল্য সারা দেশ তো বটেই, বিশ্ব মঞ্চে কালাজ্বর নির্মূল প্রকল্পের মডেল হতে পারত। এমন একটি সুযোগ রাজ্য হেলায় হারাল কেন, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একটি অংশ তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট শিবিরের অনেকের আশা ছিল, পরিদর্শনের অনুমতি মেলেনি ঠিকই। কিন্তু পরিদর্শনের পরে বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি, পরবর্তী করণীয় ও সুপারিশ নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ দিয়ে সাফল্যের গরিমা রক্ষা করবে রাজ্য। ১৭-২০ ডিসেম্বর ছিল সেই আলোচনা। আশা পূরণ হয়নি। ‘‘ওই আলোচনায় যোগ দিতে পারলেও লাভ হত। ভাল কাজের স্বীকৃতি হারালাম,’’ বলছেন এক আধিকারিক।