ট্যাক্সি চালককে জল খাওয়াচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়ার। —নিজস্ব চিত্র।
না মেঘের আভাস। না ঝড়ের তর্জনী। বৈশাখী প্রকৃতির রুদ্ররোষ প্রশমনের কোনও লক্ষণই নেই। উল্টে এলাকা বেড়ে চলেছে তাপপ্রবাহের। গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের সতর্কতা ছিলই। এ বার সেই তালিকায় ঢুকল উত্তরবঙ্গও। হাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, শনিবার দক্ষিণবঙ্গের আটটি জেলার পাশাপাশি তাপপ্রবাহের আশঙ্কা আছে উত্তরবঙ্গের মালদহেও।
কয়েক দিন ধরেই কার্যত উত্তপ্ত কড়াইয়ে পুড়ছে দক্ষিণবঙ্গ। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে তাপপ্রবাহ বয়েছে। শুক্রবার মুর্শিদাবাদ-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের মোট আটটি জেলায় তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে এ দিন বহরমপুর ও ঝাড়গ্রামে তাপপ্রবাহ বইলেও বাকি জেলাগুলি অল্পের জন্য তার আওতায় পড়েনি বলে হাওয়া অফিসের খবর।
আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, গরমকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (যদি সেটি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়) স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। ঝাড়গ্রাম ও বহরমপুরে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি উপরে ছিল। তবে স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি উপরে ছিল। তবে পুরুলিয়া, শ্রীনিকেতন, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি উপরে থিতু হয়েছে। কাগজে-কলমে সেটা তাপপ্রবাহের তকমা না-পেলেও দহনমাত্রায় রেহাই মেলেনি। খাস কলকাতার তাপমাত্রা এ দিন স্বাভাবিকের মাত্র এক ডিগ্রি উপরে থাকলেও দমদমে তা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠা পেরিয়েছে।
মে মাসে তীব্র গরম অস্বাভাবিক নয়। তবে সে-দিক থেকে ২০১৮ ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। হাওয়া অফিসের খবর, গত বছর মে মাসে একাধিক ঘূর্ণাবর্তের সুবাদে বেশ বৃষ্টি হয়েছিল। এপ্রিলের গোড়ায় জাঁকিয়ে গরম পড়লেও মে মাসে দহন সে-ভাবে মাত্রা ছাড়ায়নি। এমনকি মে মাসের মাঝামাঝি এক দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কোঠাতেই পৌঁছতে পারেনি। এ বছর মার্চ ও এপ্রিলের গোড়ায় গরম তেমন মালুম হয়নি। তা হলে কি গরমের চরিত্র বদলাল?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আবহবিজ্ঞানীরা অবশ্য গরমের চরিত্র বদলের কথা মানছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে যে-উচ্চচাপ বলয় থাকে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে তা উধাও হয়ে গিয়েছে। ফলে সাগর থেকে জলীয় বাষ্প গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকতে পারছে না। উল্টো দিক থেকে ঝাড়খণ্ড-বিহারের গরম হাওয়া ঢুকছে। সে-দিকে তাপের প্রবাহ বাড়ছে। যেটুকু জোলো হাওয়া সাগর থেকে আসছে, তার ধাক্কায় খাস কলকাতায় অস্বস্তি চরমে উঠেছে। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘এ দিন দুপুরে কলকাতার অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৫.৮।’’ গত দু’দিনে এই সূচক ৬৭ ডিগ্রির উপরে ছিল। এ দিন তার থেকে কিছুটা নেমেছে। সাধারণ ভাবে এই সূচক ৫৫ হলেই অস্বস্তি মালুম হতে থাকে। আমজনতার অবশ্য বক্তব্য, অস্বস্তির সূচক সামান্য নামলেও স্বস্তির ছোঁয়া মেলেনি। আগের দু’দিনের তুলনায় এ দিন অস্বস্তি কিছু কম মালুম হয়নি। বরং সামান্য রোদে থাকলেই হাঁপিয়ে উঠেছেন মানুষজন। গরমে পথেঘাটে অনেকে রীতিমতো অসুস্থও হয়ে পড়েছেন।
কোথায় কত∗
• বাঁকুড়া ৪২.৮
• আসানসোল ৪২.৫
• পুরুলিয়া ৪২.৩
• ঝাড়গ্রাম ৪১.৫
• বহরমপুর ৪১.২
• বর্ধমান ৪১.০
• শ্রীনিকেতন ৪০.৬
• মেদিনীপুর ৪০.৫
• দমদম ৩৯.২
• আলিপুর ৩৬.৭
∗ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে
এই পরিস্থিতিতে সেই একই প্রশ্ন মুখে মুখে। স্বস্তি নিয়ে কবে আসবে ঝড়বৃষ্টি? আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ঝড়বৃষ্টির মেঘ তৈরি হতে গেলে গোটা গাঙ্গেয় বঙ্গে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প প্রয়োজন। বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন উচ্চচাপ বলয় তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটি এখনও সে-ভাবে জোরদার হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে সেই উচ্চচাপের হাওয়া পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে কবে ঝড়বৃষ্টির মেঘ তৈরি করবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না আবহবিদেরা।