ঝঞ্ঝা-উচ্চচাপের গেরো কাটিয়ে শীতের আশা

এ বার আসার আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল শীত। তার কারণ আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘পবন’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫০
Share:

ছবি এএফপি।

হাড়কাঁপানো ঠান্ডা নয় ঠিকই। তবু পারদ পতনের বিচারে গত পাঁচ বছরের তুলনায় মোটামুটি উতরে গেল এ বারের বড়দিন। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, বুধবার, বড়দিনে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। গত পাঁচ বছরের নিরিখে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। গত বছর বড়দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৯ ডিগ্রি। ২০১৬ এবং ২০১৫ সালে অবশ্য রীতিমতো গরমেই কেটেছিল ২৫ ডিসেম্বর।

Advertisement

এ বার আসার আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল শীত। তার কারণ আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘পবন’। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পেরোতে না-পেরোতেই উত্তুরে হাওয়ার ধাক্কায় তাপমাত্রা ঝুপ করে নেমে যায়। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় গাঙ্গেয় বঙ্গের কয়েকটি জেলায়। কলকাতাতেও দিন দুয়েক জোর ঠান্ডা ছিল। এ-সব দেখেই শীত-সান্নিধ্যে বড়দিন কাটানোর আশায় ছিল বাঙালি। কিন্তু সেই আশায় অনেকটাই জল ঢেলে দেয় পশ্চিমি ঝঞ্ঝা আর বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপের যুগলবন্দি।

আবহবিজ্ঞানীরা জানান, একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে আসা ঠান্ডা জোলো হাওয়া) ধেয়ে এসেছে রাজ্যের দিকে। ওড়িশা উপকূলে তৈরি হয়েছে একটি উচ্চচাপ বলয়। তার ফলে উত্তুরে হাওয়া বাধা পাচ্ছে। দিনের বেলায় মেঘ তৈরি হয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে থাকলেও রাতে মাটির উত্তাপ বিকিরিত হয়ে ফিরে যেতে পারছে না। ফলে রাতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ছে না। তাই শীত-শীত অনুভূতি থাকলেও এটাকে গাঙ্গেয় বঙ্গের শীতের চেনা চরিত্র বলতে রাজি নন আবহবিজ্ঞানীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (১৫.৭ ডিগ্রি) স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি উপরে উঠে গিয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে যায় ২০.৩ ডিগ্রিতে, যা স্বাভাবিকের থেকে ছয় ডিগ্রি কম। অনেক জেলায় অবশ্য শীত ভালই মালুম হয়েছে। আসানসোলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৭ ডিগ্রি, বহরমপুরে ১১। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে তিন এবং পাঁচ ডিগ্রি।

দিল্লির মৌসম ভবনের খবর, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। অনেক জায়গাতেই রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি নীচে রয়েছে। পঞ্জাব, হরিয়ানার বহু জায়গায় ঘন কুয়াশার জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৯-১০ ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে গিয়েছে। পঞ্জাবের লুধিয়ানায় এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.৩ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে ১০ ডিগ্রি কম। কাশ্মীরের শ্রীনগরে রাতের তাপমাত্রা নেমেছে হিমাঙ্কের পাঁচ ডিগ্রি নীচে। দেশের সমতল এলাকার মধ্যে রাজস্থানের সিকারে রাতের তাপমাত্রা শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে!

কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গেও শীতের ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছেন আবহবিদেরা। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, আজ, শুক্রবার থেকেই ঝঞ্ঝা ও উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাব কাটতে শুরু করবে। মিলবে পারদ পতনের ইঙ্গিতও। শনিবার থেকে পারদ দ্রুত নামতে পারে। সপ্তাহান্তে জোরদার শীতের আশাও করছেন অনেকে। সপ্তাহ পেরোলেই বর্ষশেষের উৎসব।

বছরের শেষ বেলায় কি বাঙালির প্রত্যাশা মেটাবে উত্তুরে হাওয়া?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement