নতুন ভিডিয়োয় গঙ্গাধর কয়াল। ছবি: সংগৃহীত।
‘সন্দেশখালি স্টিং অপারেশনের’ দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ্যে এসেছে শনিবার রাতে। আগেরটির মতো এই ভিডিয়োটিরও সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। এই ভিডিয়োতেও সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সেই গঙ্গাধর কয়ালকেই দেখা গেল। ৪৬ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োয় বেশ কয়েক জন আন্দোলনকারীর নাম এবং ফোন নম্বর প্রকাশ করেছেন গঙ্গাধর। তাঁদের সকলেই মহিলা। আনন্দবাজার অনলাইন তাদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কেউ ফোন ধরেছেন, কেউ ফোন ধরেননি। যাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁদের সকলেই জানান, তাঁরা গঙ্গাধরকে চেনেন। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, আন্দোলন করার জন্য গঙ্গাধরের কাছ থেকে কোনও টাকা নেননি। দ্বিতীয় ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে গঙ্গাধরের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর মোবাইল সুইচ্ড অফ ছিল।
ভিডিয়োর শুরুতেই, সন্দেশখালিতে যে মহিলারা আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের আর্থিক সাহায্য করার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শোনা গিয়েছে গঙ্গাধরকে। একে একে ফোন নম্বর-সহ মোট ৪২ জন মহিলার নাম নিয়েছেন গঙ্গাধর। ভিডিয়ো থেকে জানা গিয়েছে, তার মধ্যে দু’-এক জনের নম্বর তাঁর কাছে ছিল না। কারও কারও নম্বর অসম্পূর্ণ বলেছেন তিনি। ভিডিয়োয় যাঁদের নাম শোনা গিয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিংহপাড়ার অঞ্জলি সিংহ, মামনি সিংহ, লতিকা সিংহ, কালোমতি সিংহ-সহ আরও বেশ কয়েক জন। সিংহাপাড়া ছাড়াও পোলপাড়া, মাঝেরপাড়া, নতুনপাড়ার বেশ কয়েক জন মহিলার নামও বলেছেন গঙ্গাধর। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফ থেকে এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কয়েক জন ফোন ধরেননি। কয়েক জন ফোন ধরেই প্রথমেই প্রশ্ন করেন, ‘‘কী বলছে গঙ্গাধর? আমার নাম কেন নিল? আমি কোনও টাকা নিইনি।’’ একে একে যখন সকলের নাম বলছিলেন গঙ্গাধর, তাঁদের মধ্যে এক জন ছিলেন মায়া দে। গঙ্গাধরের বক্তব্য অনুযায়ী, “এক জন সাংঘাতিক মহিলা। মুখ খুলতে পারে বিশাল। আপনারা যদি মায়ার সঙ্গে এক বার কথা বলতে পারেন, তা হলে লড়িয়ে দিতে পারবেন। তৈরি করতে হবে।” সেই মায়াকে ফোন করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি।
সন্দেশখালির প্রথম ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল গত শনিবার। যা রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সন্দেশখালিতে ‘স্টিং অপারেশন’ বা গোপন ক্যামেরা অভিযান করে ওই ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই দেখা গিয়েছিল গঙ্গাধরকে। ওই ভিডিয়োতে দেখা যায়, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের কাছে তিনি নিজে স্বীকার করছেন, সন্দেশখালির আন্দোলন সাজানো। টাকার বিনিময়ে সেখানকার মহিলারা তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং অত্যাচারের ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে অবশ্য সেই ভিডিয়োর সত্যতাও যাচাই করা হয়নি। দ্বিতীয় ভিডিয়োয় ধর্ষণের অভিযোগের কথা ওঠেনি যদিও।
দ্বিতীয় পর্বের ভিডিয়োটির পুরোটাই আন্দোলনকারীদের কে কে টাকা পেয়েছেন, আন্দোলন জিইয়ে রাখতে কাদের কাদের টাকা দিতে হবে, মহিলাদের কী ভাবে পরিচালনা করতে হবে, বুথ প্রতি কত খরচ করতে হবে— সেই সংক্রান্ত বিষয়ে বলতে শোনা গিয়েছে গঙ্গাধরকে। ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রকাশ্যে আসার পর অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। কারণ, ওই ভিডিয়োতে গঙ্গাধরকে একাধিক বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম বলতে শোনা গিয়েছে। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় ভিডিয়োতেও উঠে এসেছে তাঁর নাম। শুভেন্দুর মাঝের পাড়ার অফিসের কথা। কাকে টাকা দিয়েছেন শুভেন্দু, সেই টাকা নয়ছয় হয়েছে কি না— এ সব বিষয়েও বলতে শোনা গিয়েছে গঙ্গাধরকে।