শান্তি পাসোয়ান।
প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বিয়ের পরেও দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। স্বামী দিনমজুর। নিজে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। দিন আনি দিন খাই-এর মধ্যেই ডালখোলার শান্তিপাড়ার বাসিন্দা শান্তি পাসোয়ান এ বার পুরভোটে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গেরুয়া প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের ওজনদার
প্রার্থী, যুব তৃণমূলের শহর সভাপতি রাকেশ সরকার।
শান্তির দুই ছেলে। বড় ছেলে দোকানে দোকানে সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন। ছোট ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। মেয়ে পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। স্বামী দীনেশ পাসোয়ান দিনমজুর, তবে দু'বছর ধরে তিনি অসুস্থ। এর মধ্যেই শান্তি গত কয়েক বছর ধরে বিজেপির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এ বারে তাঁকে দল প্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়ার পরে শান্তি গৃহস্থবাড়ির কাজ থেকে আপাতত এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। প্রচার করতে হবে না?
গত বিধানসভা নির্বাচনে এমন দু’জনকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এক জন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার কলিতা মাঝি। তিনি আউশগ্রামে প্রার্থী হয়েছিলেন। বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন কলিতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগে কলিতার নাম উল্লেখ করে টুইটও করেছিলেন। যদিও কলিতা হেরে যান। এমনই দুঃস্থ পরিবারের চন্দনা বাউড়ি অবশ্য বিজেপির প্রার্থী হিসাবে বাঁকুড়ার শালতোড়া আসনটি থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই দিনমজুর।
শান্তি এ দিন বলেন, ‘‘মোদীজির প্রকল্পগুলি ভাল লাগে। দল আমাকে লড়াইয়ের জন্য বেছে নেওয়ায় খুশি হয়েছি৷ ভোটে জিতে গরিবের কষ্ট দূর করতে চাই।’’ এ হেন শান্তি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যে টাকা পেয়েছিলেন, তাতে ঘর সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘টিনের ছাউনি দিয়ে কোনও মতে মাথার গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। মেলেনি। উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগ নিলেও মিলছে না ভর্তুকি।’’ কিন্তু উজ্জ্বলা গ্যাস তো কেন্দ্রের প্রকল্প? তা অবশ্য জানেন না শান্তি।
ডালখোলার বিজেপি নেতা জগদীশ কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমাদের দল গরিব মানুষের স্বার্থে লড়াই করে। একজন পরিচারিকাকে প্রার্থী করে দল সেটা বুঝিয়ে দিল।’’ এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রাকেশ অবশ্য বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। যে কেউ দাঁড়াতে পারেন।’’ তার পরেই তাঁর খোঁচা, ‘‘শান্তিদেবী মোদীজিকে গরিব দরদী বলছেন। তা হলে মোদীজির উজ্জ্বলা গ্যাস তিনি পাচ্ছেন না কেন?’’