কিছু জায়গায় শাস্তি ঘোষণা করা হলেও বহু জায়গায় তা করতে পারেননি জেলা নেতৃত্ব। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির এই অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভায় গোঁজ রয়েছে।
ফাইল চিত্র।
বেনজির পরিস্থিতিতে ১০৮ টি পুরসভার ভোটে দুটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছিল তৃণমূলের। শুধু বিভ্রান্তি তৈরিই নয়, মনোনয়নও জমা পড়েছিল সেই দুই তালিকার ভিত্তিতেই। এ বার দলের স্বীকৃত তালিকার বাইরে যাঁরা নির্দল হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের সরকারি সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূলের তরফে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে গোঁজ প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। তা না করলে দল যে কড়া পদক্ষেপ করবে সে কথাও জানিয়েছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই মতো বৃহস্পতিবার একাধিক জেলায় বহু ‘গোঁজ’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্ব। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন। জেলায় জেলায় বহিষ্কার শুরু হয়েছে। এখনও যাঁরা লড়াইয়ে আছেন, তাঁদের বলব, সরে দাঁড়ান। দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমে পড়ুন।’’
বুধবার ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ১৯ জন নির্দল প্রার্থীকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। ঝাড়গ্রামে গিয়ে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন জেলার দায়িত্বে থাকা পার্থবাবু নিজেই। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা রাজি না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিক্ষুব্ধরাও দলীয় নেতাদের অনুরোধ ফিরিয়ে দেওয়ায় তাঁদের বহিষ্কার করা হয়।
বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় ৮ জন, বীরভূমে তিনজন এবং নদিয়ায় ২৩ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নদিয়ার শুধু কৃষ্ণনগর পুরসভার ভোটেই দলের শাস্তির কোপে পড়েছেন একডজনের বেশি স্থানীয় নেতা-কর্মী। দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূমের দুবররাজপুরে তিন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীকে এ দিন বহিষ্কার করা হয়েছে। এ দিন একটি কর্মিসভায় দলের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন জেলার নেতা তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।
কিছু জায়গায় শাস্তি ঘোষণা করা হলেও বহু জায়গায় তা করতে পারেননি জেলা নেতৃত্ব। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির এই অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভায় গোঁজ রয়েছে। দমদম অঞ্চলের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকায় দল তাঁকে প্রার্থী করেনি। বৈভব সংক্রান্ত অভিযোগেই তাঁকে এ বার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। কিন্তু নির্দল হিসেবে তিনি স্বমহিমায় রয়েছেন ‘দলেরই একাংশে’র সাহায্যে। তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি, দলও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
এই জেলার হাবড়া, অশোকনগর এবং বারাসাত পুরসভার গোঁজ সম্পর্কেও এখনও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতরেই। এ দিন এ সব নিয়ে জেলার নেতারা বৈঠক করলেও সমাধানসূত্র মেলেনি।
হুগলির দলের তালিকার বাইরে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক। জেলার ১২টি পুরসভার মধ্যে উত্তরপাড়ায় ১২, ডানকুনিতে ৫, বৈদ্যবাটিতে ১৩, চাপদানিতে ২, শ্রীরামপুরে ১ এবং আরামবাগে ৩ জন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। দলের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে মাত্র ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
কোচবিহারে ৫ নির্দলের কেউ-ই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। জলপাইগুড়িতে লড়াইতে আছেন ২ বিক্ষুব্ধ। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান ভরত ঝাওর নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে। কান্দি, জিয়াগঞ্জ, আজিমগঞ্জেও নির্দল রয়েছে। মুর্শিদাবাদ পুরসভায় ৩, ধুলিয়ান পুরসভায় ৫ জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। জঙ্গিপুর পুরসভায় এক তৃণমূলনেত্রী নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
দলীয় সূত্রে খবর, গোঁজ প্রার্থীর সমস্যা তীব্র হলেও বহু জেলায় তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করেননি জেলা দলের নেতারা। পার্থবাবু অবশ্য দলের অবস্থান জানিয়ে ফের এ দিন বলেন, ‘‘নির্দল প্রার্থী জিতলেও দলে তাঁদের জায়গা হবে না। আশা করব, এ কথা মাথায় রেখে এখনও বিক্ষুব্ধরা লড়াই থেকে সরে যাবেন।’