১০৮টি পুরসভা মিলিয়ে ২২৭২টি ওয়ার্ডে ভোট হবে। রাজ্য বিজেপির একাংশের দাবি, শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সিংহভাগ জায়গাতেই দলীয় কর্মীরা হয় নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন, নয়তো তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।
প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটের তুলনায় পুরভোটের প্রচারে বিজেপিকে কিছুটা ছন্নছাড়া দেখিয়েছে। এই অবস্থায় শুক্রবার পুরভোটের প্রচার শেষ হওয়ার পরে দলের অন্দরে অনেকের প্রশ্ন, রবিবার ভোটের সময় বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যাবে তো? রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের মধ্যেও আমাদের কর্মীরা ভোটের দিন বুথ আগলানোর জন্য তৈরি হচ্ছেন। আমাদের ফলও ভাল হবে।”
রবিবার ১০৮টি পুরসভা মিলিয়ে ২২৭২টি ওয়ার্ডে ভোট হবে। রাজ্য বিজেপির একাংশের দাবি, শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সিংহভাগ জায়গাতেই দলীয় কর্মীরা হয় নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন, নয়তো তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। এই অবস্থায় কোথাও কোথাও দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখাই দলের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধী দলনেতা সুকান্ত মজুমদার অবশ্য এই অবস্থাতেও নিজের নিজের গড়ে পুরবোর্ড গড়ার লড়াইতে নেমেছেন। সুকান্ত বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, দিলীপ মেদিনীপুর এবং শুভেন্দু কাঁথি, তমলুক এবং সংলগ্ন এলাকায় মাটি কামড়ে ভোটের প্রচার করেছেন। রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, এমনিতেই দল এখন অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার। এই অবস্থায় সুকান্ত, দিলীপ এবং শুভেন্দু নিজের লোকসভা বা বিধানসভা এলাকায় পুরভোটে দলকে জেতাতে না পারলে দলের অন্দরের সমীকরণে তাঁদের প্রতাপ কমবে। ফলে তাঁরা প্রচারে কোনও খামতি রাখেননি। কিন্তু তাঁদের এলাকাগুলিতেও ভোটের দিন পোলিং এজেন্টরা বুথে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের অন্দরে।
কলকাতা, বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল এবং শিলিগুড়ি— এই পাঁচ পুর-নিগমের ভোটে পুলিশ এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোট চেয়েছিল বিজেপি। সেই আর্জি নিয়ে আদালতেও গিয়েছিল তারা। কিন্তু আদালতের রায় তাদের অনুকূলে যায়নি। এ বার ১০৮টি পুরসভার ভোটেও তাদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি আদালত খারিজ করে দিয়েছে। তৃণমূলকে মোকাবিলার করার মতো সংগঠন তৈরি না করে বার বার আদালতের উপরে নির্ভর করা নিয়েও রাজ্য বিজেপির অন্দরে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, “আমরা রাজনৈতিক দল। আদালতের ভরসায় রাজনীতি হয় না। আমাদের মাঠে থাকতে হবে। ভোটে জিততে হলে সংগঠন লাগে। সংগঠন থাকলে বার বার আদালতে যেতে হত না।”
বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীকের অবশ্য বক্তব্য, “কলকাতা-সহ পাঁচ পুর-নিগমের নির্বাচনে তৃণমূল যে অবাধে ভোট লুঠ করেছে, সেটা সবাই দেখেছে। বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূলের সন্ত্রাসের আমাদের ৫৫ জন কর্মী নিহত হয়েছে। অজস্র কর্মী ঘরছাড়া। পুলিশ, নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের শাখা সংগঠন। এখানে আমাদের সংগঠন আছে কি নেই, তা প্রমাণ করারই তো সুযোগ নেই। তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি।’’
এ দিকে, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বুধবার কলকাতায় ফিরেও পুরভোটের প্রচারে নামেননি। বিজেপি সূত্রের দাবি, তিনি দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ শিবিরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। লকেট অবশ্য বলেন, “ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনও ব্যাপার নেই। আমার শরীর খারাপ। তাই বেরোইনি।”