(বাঁ দিকে) সিভি আনন্দ বোস। অমিত শাহ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের তিন প্রথম সারির আধিকারিকের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ করার সুপারিশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় রয়েছেন রাজ্যপালের নিশানায়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ৬ জুন এবং ২০ জুন শাহকে লেখা দু’টি চিঠিতে, ‘বোস অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস’ (এআইএস)-এর অফিসারদের আচরণবিধি সংক্রান্ত শর্ত লঙ্ঘনের জন্য ওই তিন অফিসারকে অভিযুক্ত করেছেন। রাজভবন সূত্রের খবর, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগে তদন্ত করার অভিযোগে এর আগে রাজ্যপাল কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট ডিসিকে অপসারণের আর্জি জানিয়ে নবান্ন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আইএএস, আইপিএস ক্যাডার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তথা ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-কে চিঠি লিখেছিলেন।
নর্থ ব্লকের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বোসের চিঠি পেয়ে কার্যত হতবাক হয়ে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকেরা। বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালেরা নিয়মিত ভাবে রাজ্যের নানা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পাঠালেও এ ভাবে রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন না।
৬ জুন শাহকে পাঠানো চিঠিতে গোপালিক, বিনীত, ইন্দিরার নাম করে বোস লিখেছেন, ‘‘এই অফিসারেরা নির্লজ্জ ভাবে সংবিধানিক কার্যপ্রণালী এবং বিশেষ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। যদি ওই কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তা হলে ভুল বার্তা যাবে। যার ফলে পরিষেবার আরও অবনতি হতে পারে এবং এর ফলে জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি হতে পারে।’’ ওই চিঠিতে গোপালিকের বিরুদ্ধে আইএসএস কার্যবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি ‘দুর্নীতিতে সহায়তা করা এবং উৎসাহ দেওয়ার’ অভিযোগ এনেছেন বোস। এ প্রসঙ্গে চাকরি সংক্রান্ত দুর্নীতি, উপাচার্য নিয়োগে অনিয়ম এবং রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা জানিয়েছেন শাহকে।
২০ জুনের চিঠিতে বিনীত এবং গোপালিকের নাম করে বোস তাঁর বিরুদ্ধে রাজভবনকাণ্ডে তদন্তের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁকে রাজ্য থেকে সরানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। প্রসঙ্গত, গত ২ মে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী এক মহিলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগের তদন্ত করা যায় না বলে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি কলকাতা পুলিশ। তবে অভিযোগ না-লিখলেও মহিলার বয়ানের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়েছিল কলকাতা পুলিশ।
ডিসি (সেন্ট্রাল) বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হন বলেও লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছিল। পুলিশ উদ্যোগী হয়ে রাজভবনের সিসি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ সংগ্রহ করে মহিলার সঙ্গে কিছু হয়েছে কি না ‘বোঝার চেষ্টা’ করেছিল সে সময়। মহিলাকে পুলিশের কাছে যেতে বাধা দেওয়ায় রাজভবনের কয়েক জন আধিকারিকের নামে মামলাও রুজু করেছিল পুলিশ। কলকাতা হাই কোর্টের স্থগিতাদেশে সেই তদন্ত স্থগিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নতুন মাত্রা পেয়েছে রাজ্যপাল-রাজ্য সরকারের সংঘাত।