নিজের অবস্থানে অনড় তথাগত রায়। ফাইল চিত্র।
দলের নেতাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ডেকে পাঠিয়েছে তাঁকে। কিন্তু এখনই দিল্লি যাচ্ছেন না তথাগত রায়। বরং, নিজের অভিযোগকে আরও জোরদার করতে দিল্লির নেতাদের চিঠি দিতে চলেছেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তথাগত জানালেন, ‘‘আমি করোনা আক্রান্ত। এখন অনেকটাই সুস্থ। কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত দিল্লি যেতে পারব না। তবে এ বার আর মৌখিক নয়, লিখিত অভিযোগ জমা দেব।’’ তথাগত কারও নাম উল্লেখ না করলেও ভোটের আগে বিজেপি-তে যোগ দেওয়াদের একাংশকে ‘চোর, লম্পট, বদমায়েশ, দুশ্চরিত্র’ বলেও আঙুল তুলেছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ভরাডুবির পর দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩ কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে আগেই প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন তথাগত। নীলবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপি-র ৩ তারকা-প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তীদের উদ্দেশ্য করে ‘নগরীর নটী’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। এর পরে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ক্ষোভ জানান ওই প্রার্থীরা। তথাগত সরাসরি নিশানা করেন দিলীপ, কৈলাস ছাড়াও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকে। ওই ৪ জনকে ‘কেডিএসএ’ বলে উল্লেখ করে তথাগত টুইটে দাবি করেন, এঁরাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের নাম পাঁকে টেনে এনেছেন এবং এঁদের জন্যই পৃথিবীর বৃহত্তম দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে তলব করেছেন বলে তথাগত নিজেই জানান। তবে কে তাঁকে ডেকেছেন তা খোলসা করেননি। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘কে ডেকেছেন তা আমি বলছি না। তবে একেবারে উপরমহল থেকেই আমাকে ডাকা হয়েছে। করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট পেলেই আমি যাব। যা বলার ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছি। এ বার সবিস্তারে লিখছি।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘আমি জানাব কী ভাবে এই নেতারা দলের সর্বনাশ করেছেন।’’
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে ভোটের আগে যাঁরা বিজেপি-তে এসেছেন তাঁদের নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তথাগতর। বলেন, ‘‘যোগদেন মেলা কাদের নিয়ে হয়েছে? চোর, দুশ্চরিত্র, বদমায়েশ, লম্পটদের নিয়ে যোগদান মেলা হয়েছে।’’ তবে সঙ্ঘ পরিবারের কর্তাদের প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই তথাগতর। তিনি বলেন, ‘‘সঙ্ঘের পক্ষে যা বলা হয়েছিল সম্ভবত তা শোনা হয়নি। ফলে তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন।’’
উত্তর-পূর্বের ৩ রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল অতীতেও অনেকবার নানা মন্তব্য করে বিজেপি-কে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। এ বার দলের বিপর্যয়ের সময়ে ফের একই ভূমিকায় তিনি। তবে রাজ্য বিজেপি নেতাদের কেউই তথাগতর মন্তব্যের জবাবে প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ। শীর্ষ নেতারা সকলেই বলছেন, যা বলার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলবেন। মুখ না খোলার কারণ হিসেবে এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘তথাগতদা যা বলছেন, সেটা বহু নেতাকর্মীরও মনের কথা। এই সময়ে তাই কিছু বলা ঠিক হবে না। এখন কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের কাজ। সেটাই আমরা করছি। ওটা দিল্লি দেখছে।’’