গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ভোট বিপর্যয়ের পর্যালোচনার গণ্ডি বড় করতে সিপিএম দলীয় বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত চেয়েছে। সেই মর্মে বুধবার একটি ইমেল আইডি দিয়ে রাজ্য সিপিএমের তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল, যে কেউ ‘খোলা মনে’ দলকে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। সিপিএম সূত্রে খবর, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আলিমুদ্দিনের ডিজ়িটাল ডাকবাক্সে প্রায় হাজার খানেক বার্তা পৌঁছেছে। তাতে কী রয়েছে সে বিষয়ে আলিমুদ্দিনের কেউই মুখ খুলতে চাননি। তবে বিভিন্ন জেলা সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা, সাংগঠনিক কাঠামো, নেতৃত্বের জনবিচ্ছিন্নতা, বুথ স্তরে সাংগঠনিক বেহাল দশা— এ হেন বিবিধ চোখা চোখা সমালোচনামূলক বার্তা যাচ্ছে রাজ্য দফতরের ইমেলে।
রাজ্যস্তরে তরুণ মুখেদের সামনে রাখলেও নিচুতলায় তা কেন হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন করেছেন অনেকে। দলে তরুণ অংশের প্রতিনিধিত্ব রাখতে এরিয়া কমিটিতে অনূর্ধ্ব ৩১-এর সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল। তিন বছর কাটতে চললেও রাজ্যের বহু এরিয়া কমিটি সেই ফাঁকা জায়গা পূরণ করেনি বলেও অভিযোগ লিখছেন নিচুতলার অনেকে।
কমিটির আমলাতন্ত্র ভাঙতে জ়োনাল ও লোকাল কমিটি তুলে দিয়ে বছর পাঁচেক আগে সিপিএম জেলা ও শাখা কমিটির মাঝে একটি কমিটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জানা গিয়েছে, একাধিক জেলা থেকে এই প্রশ্ন এসেছে, এরিয়া কমিটির কাঠামো করে লাভ কী হল? এরিয়া স্তরের বেশির ভাগ অংশের নেতাদের যে শাখা বা বুথস্তরে সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, সেই বার্তাও পাঠিয়েছেন কেউ কেউ।
জনৈক এক সিপিএম কর্মী লিখে পাঠিয়েছেন, সমাজমাধ্যমে প্রচার সংগঠিত ভাবে হলেও বুথস্তরে সেই ছবি নেই। অর্থাৎ যিনি বুথে কাজ করেন, তিনি বড় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন সমাজমাধ্যমে, কিন্তু পাশের লোককে চেনেন না। প্রবীণ সিপিএম নেতা কয়েক মাস আগে কলকাতার কৃষক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘‘কর্মসূচি নয়। দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলন করতে হবে।’’ সূত্রের খবর, কেউ কেউ সেই ব্যামোর কথাই দলকে জানিয়েছেন। রাজ্যস্তরের নেতারা কেন নিচুতলায় গিয়ে কাজ করছেন না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। অনেক জায়গায় নেতৃত্বের অংশ স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ করে চলছে বলেও অভিযোগ পৌঁছেছে আলিমুদ্দিনে।
সিপিএমের অনেকে মনে করছেন, এ হেন ক্ষোভ যত জানা যাবে তত বাস্তব ছবি জানতে সুবিধা হবে। নেতাদের অনেকে ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, বুথস্তরে সাংগঠনিক বাস্তব ছবি কী, তা নেতৃত্বের অজানা। অনেক সময়েই নিচুতলা থেকে ‘ভুয়ো’ রিপোর্ট পৌঁছচ্ছে। ফলে ব্রিগেড ভরলেও ভোটবাক্স খালি থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশিই, সিপিএমের অনেকে এ-ও মনে করছেন, যত বেশি ক্ষোভ বেরিয়ে যাবে দলের সম্মেলন প্রক্রিয়া তত শান্তিতে করা যাবে। কিন্তু আদৌ তা কতটা হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।