—গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলায় সিপিএম তথা বামেরা শূন্য হয়ে যাওয়ার পর ‘নির্মম আত্মসমালোচনা’ করেছিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। একে গোপালন ভবন স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে এক করে দেখানো মোটেই ঠিক কাজ হয়নি। কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই ‘খারিজ’ হয়ে যাওয়া লাইনেই হাঁটা শুরু করে দিল বঙ্গ সিপিএম। সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনায়, একাধিক টুইটে আলিমুদ্দিনের আইটি সেল কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি যতই ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব খারিজ করুক, তারা সেই লাইনেই হাঁটবে।
তবে দলীয় কোনও হ্যান্ডল বা প্রোফাইল থেকে ‘বিজেমূল’ লেখা হয়নি। কোনও প্রথম সারির নেতাও সেই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেননি। কিন্তু জয়নগরকাণ্ড থেকে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ)-এর উদ্দেশে যা বলেছেন, সে সব নিয়েই তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক করে দেখানোর পুরনো সরণিতে ফিরে গিয়েছে সিপিএম।
জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে সিপিএম ত্রাণ দিতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়েছিল। তার পরে হাই কোর্টে মামলা করে সেখানে যাওয়ার অনুমতি পায় তারা। সিপিএম যে দিন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছয়, সে দিনই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই গ্রামে পৌঁছয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধিদল। সিপিএমের বক্তব্য, তাদের পৌঁছতে আদালত পর্যন্ত ছুটতে হয়েছিল। কিন্তু বিজেপিকে কোনও বাধাই পেতে হয়নি! আবার অতীতে তৃণমূল এনডিএ শরিক থাকার সময়ে মমতার সঙ্গে আরএসএস-এর সম্পর্কের কথাও টেনে আনা হচ্ছে সিপিএমের সমাজমাধ্যমের প্রচারে। সম্প্রতি দলের বিশেষ অধিবেশনে নেতাজি ইন্ডোর থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘ছটপুজোর সময় আমি গঙ্গার ঘাটে গিয়ে দেখলাম, একটা ক্যাম্প করা রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে আরএসএস। আপনাদের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু দয়া করে ওই দু’টো লোককে আর সাপোর্ট দেবেন না।’’ মমতা কারও নাম করেননি বটে। তবে অনেকের মতে, তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী আসলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন।
কেন খারিজ হয়ে যাওয়া লাইনে হাঁটতে হচ্ছে রাজ্য সিপিএমকে? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ীর দাবি, ‘‘এ সব সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা ভাষ্য।’’ আর তৃণমূলের মুখপাত্র তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২০১৯ সালে বামের ভোট রামে যাওয়ার ফলেই বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল বাংলায়। যাকে আমি বলি ফুটকি ট্রান্সফার। সিপিএম যত খারিজ হয়ে যাওয়া লাইনে হাঁটবে, তত ওরা শূন্য থেকে মহাশূন্যের দিকে এগিয়ে যাবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ভোটের পর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যে পর্যালোচনার খসড়া তৈরি করেছিল, তা একপ্রকার খারিজ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বভারতীয় সিপিএম স্পষ্টই বলেছিল, ২০১১ সালে সরকার থেকে বিদায়ের পর যে যে ‘বিচ্যুতি’গুলি চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা আত্মস্থ করতে পারেনি বাংলা ইউনিট। সেই পর্যালোচনার পর তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘বিজেমূল’ স্লোগান দেওয়া ভুল হয়েছে। বিজেপির সঙ্গে কোনও দলকেই যে এক করে দেখা ঠিক নয় তা-ও বলা হয়েছিল সিপিএমের তরফে। কিন্তু ভোট আসতেই সে সব কার্যত উবে গিয়েছে!