(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রের প্রশংসা। পাশাপাশিই, মমতা আবার বললেন, ‘‘মহুয়াকে অন্যায় ভাবে (লোকসভা থেকে) বহিষ্কার করা হয়েছে।’’ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের আবার জেলে পাঠানোর যে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা বাংলার শাসকদল তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মহুয়ার দরাজ প্রশংসা করেছেন।
গুজরাত সরকারের বিরুদ্ধে সোমবার বড় রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলেছে, বিলকিসকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনায় মুক্তি পাওয়া ১১ জনকে ফের জেলে পাঠাতে হবে। গুজরাত সরকারের ওই ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মহুয়া। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মঙ্গলবার জয়নগরের প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘বিলকিসের ধর্ষকদের জেলে পাঠাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় পক্ষ ছিলেন মহুয়া। তাই এটা তৃণমূলের বড় জয়।’’ তবে সুপ্রিম কোর্টে বিলকিস মামলার রায় ঘোষণার পর মহুয়ার কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কারণ, তিনি গত দু’দিন ধরে দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে ফেসবুকে পোস্ট করে মহুয়া লিখেছেন, ‘‘যখন উচতম ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলাম অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছিল - তোমার কী দরকার বিলকিসের হয়ে লড়াই করার? আমি মনে করি যে চুপ করে অন্যায় সহে সে ততটাই দোষী। এই ঐতিহাসিক রায় ভারতবর্ষের বিচার ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।’’ মহুয়ার করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদের প্রশংসা করেছেন তাঁর দলের সর্বময় নেত্রী।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বহিষ্কৃত হওয়ার পরে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। আরও এক বার মহুয়া সম্পর্কে তাঁর এই মন্তব্য স্পষ্ট করে দিল, লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগরে মহুয়ার প্রার্থী হওয়া স্রেফ ঘোষণার অপেক্ষা। ২০২২ সালে বিলকিস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পরে যেমন মহুয়া মামলা করেছিলেন, তেমনই কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দু’দিন ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস।
২০২২ সালের ১৫ অগস্ট বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দিয়েছিল গুজরাত সরকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট বলে, ১১ জন ধর্ষককে মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাত সরকার, তা এক্তিয়ার-বহির্ভূত। বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের পর্যবেক্ষণ, ‘জালিয়াতি’ করে ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ১১ জনকে। মুক্তির পর দেখা গিয়েছিল, ১১ জনকে মালা পরিয়ে এলাকায় ঘোরানো হচ্ছে। যাতে তীব্র আতঙ্ক প্রকাশ করেছিলেন বিলকিস নিজে। ২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। সেই গ্রামের বাসিন্দা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। তিনি তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিলকিসের চোখের সামনে তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। সেই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছিল।