আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে সিপিএমের ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠনের প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এখনই থামছে না। ঘটনার দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে চাপ বাড়াচ্ছে বিরোধীরা। এই দাবিতে আজ, বুধবার থেকেই আন্দোলন শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি চলছে নাগরিক বিক্ষোভও।
সেই সঙ্গেই ‘মেয়েরা রাত দখল করো’র স্লোগান সামনে রেখে আজ রাতভর যে অরাজনৈতিক জমায়েতের ডাক প্রথমে দেওয়া হয়েছিল কলকাতায়, এখন রাজ্য জুড়েই সেই আহ্বান ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বাড়ছে উত্তাপ। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আজ একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিনি কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরের।
বিধানসভার বাইরে মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আগামী কাল থেকে সবাই পথে নামুন। বিশেষ করে মাতৃশক্তি— মা, বোন, দিদিরা রাস্তায় নামুন।” ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়কেরা কর্মসূচি করবেন ও দলের তরফে ধর্নায় বসা হবে বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। রাজনৈতিক পতাকা ছাড়া পথে নামার জন্য আহ্বান জানিয়ে তাঁর আরও বক্তব্য, “আসল দোষী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উৎখাত করতে সকলে একত্র হয়ে নবান্ন অভিযান করতে হবে। গুলি মারুন পতাকা!” রাজ্য বিজেপি আজ কলেজ স্কোয়ার থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে। পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ চুঁচুড়ার পিপুলপাতিতে বলেছেন, “মনে হয়, এক জন মাতলকে তুলে এনেছে। ও (ধৃত সঞ্জয় রায়) হয়তো মদ খেয়ে ঘুমোচ্ছিল, কিছুই জানে না। কে করেছে, সব জানা আছে। কিন্তু আসল চাপা দেওয়া হচ্ছে।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি দক্ষিণ পূর্ব) দফতরে কংগ্রেসের ঘেরাও-বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
রাজনৈতিক রং ছাপিয়ে প্রতিবাদ এখন দ্রুত নাগরিক চেহারাও নিচ্ছে। মেয়েদের ‘রাত দখলে’র কর্মসূচিতে সমর্থন জানাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের লোকজন। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা, পুর-প্রতিনিধিও ওই আন্দোলনের সমর্থনে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘একেবারে অরাজনৈতিক ভাবে এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য আমরা সর্বস্তরের মহিলাদের আহ্বান জানাচ্ছি। শেক্সপিয়রের নাটকে যেমন ছিল, তারই আদলে মনে হচ্ছে, এভরিথিং ইজ় রং ইন দ্য স্টেট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল!’’ মেয়েদের আন্দোলনের ডাক দেওয়ার নেপথ্যে যেমন বামেরা আছে, তেমনই আজ শহরে নাগরিক মিছিলের আয়োজনেও তাদের নেপথ্য ভূমিকা থাকছে। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত নাগরিক মিছিলে সবাইকে শামিল হতে আহ্বান জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
নাগরিক সমাজ এ দিনও পথে নেমেছিল। ‘শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী মঞ্চের’ ডাকে ‘ধিক্কার মিছিলে’ যোগ দিয়েছিলেন সুজাত ভদ্র, মীরাতুন নাহার, পল্লব কীর্তনীয়া প্রমুখ। আর জি করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছন অপর্ণা সেনও। হাসপাতালে ঢোকার মুখেই তাঁকে কয়েক জন বিক্ষোভ দেখিয়ে ফিরে যেতে বলেন। পরে অপর্ণা বলেছেন, “ছাত্রেরা যে দাবি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে আমি ১০০% একমত। আমার কণ্ঠ তোমাদের (আন্দোলনকারীদের) সঙ্গে মেলাতে এলাম।” দোষীদের শাস্তি ও চিকিৎসকদের যথাযথ নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’-ও। সাধারণ মানুষের স্বার্থে হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা যাতে চালু থাকে, সেই আর্জিও জানিয়েছে তারা।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন শ্যামবাজার থেকে মিছিল করেছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই-ও। দুই সংগঠনের প্রতিনিধিরা ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। মীনাক্ষী বলেন, “বাবা-মা ভয় পাচ্ছেন, কাকুতি-মিনতি করছেন সুবিচারের জন্য। আমরা একটা কথাই বলছি, ন্যায় বিচার চাই।” তার আগে নিহতের বাড়ির গলির মুখে পুলিশ ব্যারিকেড করে মীনাক্ষীদের আটকাতে গেলে দু’পক্ষে বাদানুবাদ বাধে। রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য শুভদ্রা মুখোপাধ্যায়ও নিহতের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, “আমাদের চেয়ারপার্সন পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আমরা বিষয়টিতে নজর রাখছি, প্রতি মুহূর্তে রিপোর্ট পাঠাচ্ছি।” আরএসপি-র ছাত্র সংগঠন পিএসইউ-র প্রতিনিধিরাও নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
সিবিআই বা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে পার্ক সার্কাসে কলকাতা পুলিশের ডিসি-র (দক্ষিণ-পূর্ব) দফতরের সামনে ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। ছিলেন কংগ্রেস নেতা তুলসী মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, বাপ্পা ঘোষেরা। অধীরের নেতৃত্বে আজ কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস।
তবে বিরোধীদের মমতার পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী গোড়া থেকে যথাযথ তদন্তের জন্য যা প্রয়োজন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য সংস্থার তদন্তেও সরকারের আপত্তি নেই জানিয়েছিলেন। ফলে, এই দাবি রাজনৈতিক ও অর্থহীন।” এই সূত্রেই হাথরস, উন্নাওয়ের ঘটনার পরে উত্তপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করেননি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কুণাল।