Sovan Chatterjee

‘আমার মানসিক সমস্যা! আসল তথ্য জানেন?’ বিস্ফোরক রত্না চট্টোপাধ্যায়

সব জানতাম। জেনেও চুপ ছিলাম। কিছু বলিনি, এমন নয়। শোভনবাবু বলতেন, ‘যেখানেই যাই, দিনের শেষে তো তোমার কাছেই ফিরে আসি।’

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ১৮:১৬
Share:

আনন্দবাজার ডিজিটালকে একান্ত সাক্ষাৎকার রত্না চট্টোপাধ্যায়ের।

মন্ত্রিসভা, পুরসভা, দল এবং নিজের বাড়ি ছেড়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় বেরিয়ে এসেছেন অনেক দিন আগেই। দলের সঙ্গে মতান্তর ও মনান্তর, স্ত্রী-র বিশ্বাসঘাতকতা এবং অনৈতিক জীবনযাপন— এমন নানা অভিযোগ তিনি তুলতেন। কিন্তু ওইটুকুতেই থেমে যেতেন, বিশদে মুখ খুলতেন না। শোভন বলতেন, ‘‘সময় এলেই সব বলব।’’

Advertisement

বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসার বছর দুয়েক পরে সম্ভবত সেই ‘সময়’টা এল। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সদ্য নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। পাশাপাশি তাঁর সম্পর্কে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের নানা মন্তব্যের জবাবও দিয়েছেন। রত্না সম্পর্কে বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছেন তিনি। যা নিয়ে আগে কখনও কোথাও কথা বলেননি, এ বারের সাক্ষাৎকারে সেই সব বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছেন শোভন।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হতে পাল্টা মুখ খুললেন রত্নাও। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার:

Advertisement

প্রশ্ন: আপনি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেছিলেন যে, বিজেপির প্রার্থী হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায় লড়তে এলে আপনি তাঁর জামানত জব্দ করে দেবেন| শোভনবাবু পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন আপনার ভোটে লড়ার যোগ্যতা নিয়ে| ডাক্তারি রিপোর্ট তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, আপনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন, সুতরাং ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ভোটে দাঁড়ানোর উপযুক্ত নন। কী বলবেন?

উত্তর: শোভনবাবুর সাক্ষাৎকারটা আমরা দেখেছি। তিনি যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা দেখে আমার ছেলে ঋষি কাল রাতে বলেছে, মা তুমি যদি মিডিয়ার সামনে এই কথার জবাব দেওয়ার সুযোগ পাও, তা হলে আমাকে দশটা মিনিট সময় দিও প্লিজ, আমি এই কথাগুলোর কয়েকটা উত্তর দিতে চাই। সাধারণত আমি এই বিষয়ে আমার ছেলে-মেয়েকে কথা বলতে দিই না। কিন্তু ঋষি খুব জোর দিয়ে বলছে, ও কিছু বলতে চায়। আমার অনুরোধ, ঋষির কথাগুলো আগে শুনে নিন। তার পরে আমি বাকিটা বলছি।

আরও পড়ুন: ‘বিজেপি থেকে পদত্যাগ তো করিনি, কিন্তু...’

প্রশ্ন: ঠিক আছে, ঋষি বলুন, কী বলতে চান।

ঋষি: দেখুন, আমার বাবা, মানে শোভন চট্টোপাধ্যায় একজন জনপ্রতিনিধি। ছোটবেলা থেকে তাঁকে জনপ্রতিনিধি হিসেবেই দেখে আসছি। আর ছোটবেলা থেকে আমাকে শেখানো হয়েছে, এটা করবে না, ওটা করবে না, এই আনন্দ করবে না, ওই আনন্দ করবে না, এমন কিছু করবে না, যাতে তোমার বাবার ইমেজ (ভাবমূর্তি) খারাপ হয়। আমার শৈশবের অর্ধেকটাই আমি এই সব বিধিনিষেধ মানতে মানতে কাটিয়ে দিয়েছি। শুধুমাত্র আমার বাবার সম্মানের কথা ভেবে। আর আজকে একটা এত বড় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে মায়ের মানসিক সমস্যা নিয়ে বাবা মন্তব্য করলেন! এই ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণে তিনি নামতে পারলেন! আমাদের মান-সম্মানের কথা একবারও ভাবলেন না!

আলিপুর আদালতে রত্না চট্টোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: নৈতিক ভাবে শোভন চট্টোপাধ্যায় ঠিক করেছেন, নাকি ভুল করেছেন, সেটা আমরা বিচার করছি না ঋষি। তিনি যে তথ্য সামনে এনেছেন, সেটা ঠিক না ভুল, প্রশ্ন সেটাই।

ঋষি: দেখুন, আমার মা কোলনের সমস্যায় ভুগছিলেন। তার চিকিৎসা করাতেই লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল। আমি নিজে আমার একটা সিমেস্টার ছেড়ে দিয়ে তখন মায়ের সঙ্গে গিয়ে লন্ডনে ছিলাম। আর যদি ধরেও নিই যে, মা ওখানে মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও করিয়েছিলেন, তা হলেও কি সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা বাবার উচিত হয়েছে?

আরও পড়ুন: কলকাতায় মেট্রো চালু ৮ থেকেই, সেপ্টেম্বরে থাকছে ঘোষিত লকডাউন

প্রশ্ন: রত্নাদি, ঋষির অনেকগুলো কথা শুনলাম। তিনি কী বলতে চাইছেন, বুঝতে পেরেছি। এ বার আপনি বলুন।

উত্তর: আমি কোলনের চিকিৎসা করাতে লন্ডনে গিয়েছিলাম। সে চিকিৎসা আমি কলকাতাতেই করাতে পারতাম। কিন্তু শোভনবাবুই বলেছিলেন, অনেক দিন ধরে ভুগছ, লন্ডন যাও, ওখান থেকে চিকিৎসা করিয়ে এস। ওটা আমার জন্য একটা ফাঁদ পাতা হয়েছিল, আমি বুঝিনি। লন্ডন যাওয়ার কিছু দিন পর থেকে বুঝতে পারলাম যে, আমাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। আমি তখন ফিরতে চাইছি, আমাকে ফিরতে দিচ্ছেন না। বার বার বলছেন— তুমি থেকে যাও, এখন ফিরবে না, তুমি ফিরলে আমি গ্রেফতার হয়ে যাব, ইডি আমাকে গ্রেফতার করে নেবে। আমি যখন জোর করছি, তখন বলছেন— তুমি যদি ফিরে আস, তা হলে আমি ন’তলা থেকে ঝাঁপ দেব, না হলে নিজের মাথায় পিস্তল চালিয়ে দেব।

ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে রত্না চট্টোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক যুবকের সম্পর্ক বা তাঁর সঙ্গে আপনার ‘অনৈতিক জীবন যাপনের’ অভিযোগও উঠে এসেছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে। আপনি অস্বীকার করতে পারবেন?

উত্তর: অনৈতিক জীবনযাপন? অবৈধ সম্পর্ক? কই, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে আমার ছেলে-মেয়েরা তো কেউ কখনও প্রশ্ন তোলে না! ২২ বছর সংসার করলাম, তখন বুঝতে পারলেন না, আমি প্রেম করছি। এত দিন পরে হঠাৎ জানলেন? অভিজিৎ আর আমার নামে যৌথ সম্পত্তি রয়েছে? জমিজমা কিনেছি? প্রমাণ করুন শোভন চট্টোপাধ্যায় যে, অভিজিৎ আর আমি একসঙ্গে সম্পত্তি করেছি। সম্পত্তি যা কেনা হয়েছে, তা সব শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নলেজে রয়েছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রায় ৩ বছর এখানে নেই। এই ৩ বছরে কিছুই কেনা হয়নি। যা কেনা হয়েছে, সব আগে হয়েছে এবং সব শোভন চট্টোপাধ্যায় জানেন। তাঁকে না জানিয়ে কিছুই হয়নি।

প্রশ্ন: এই কথাগুলো কিন্তু নতুন নয়, শোভনদা আগেও বার বার বলেছেন। এগুলো কি পুরোপুরি মিথ্যা? অভিজিৎকে সঙ্গে নিয়ে আপনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন, এই তথ্য কি ঠিক নয়?

উত্তর: আরে ব্যবসা করতে গেলে ও রকম অনেক নামে অনেক প্রতিষ্ঠান খুলতে হয়। তাতে কি প্রমাণ হয় যে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আমার বয়ফ্রেন্ড! সে তো গোপাল বলে একজনকে সঙ্গে নিয়েও খোলা হয়েছিল। আরও অনেক নামে খোলা হয়েছিল। তাঁরা সবাই আমার বয়ফ্রেন্ড! দেবাশিসকে নিয়েও এ রকম রটিয়েছিল। দেবাশিস একটা বাচ্চা ছেলে, আমার ছেলেকে পড়াতে আসত। রটিয়ে দেওয়া হল, সে-ও আমার বয়ফ্রেন্ড। এখনই বা সে কথা বাদ থাকে কেন? শুধু অভিজিৎকে নিয়ে কেন বলছেন? দেবাশিসকে নিয়েও বলতে বলুন।

প্রশ্ন: একটু অন্য কথায় আসি। রাজনীতির কথায়। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জামানত জব্দ করে দেওয়ার কথা বলে আসলে একটু বেশিই বলে ফেললেন না কি? শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জামানত জব্দ করে দেওয়া কি আপনার পক্ষে সম্ভব হবে?

উত্তর: দেখুন, প্রত্যেকটা ভোটে আমিই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পাশে ছিলাম। কোথায় দেওয়াল লিখন হবে, কোন কর্মীকে কোন এলাকায় পাঠানো হবে, কর্মীদের খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত কে করবে— সব দেখত এই রত্না চট্টোপাধ্যায়। শোভনবাবু ভোটে লড়তেন, আর গোটা প্রচার পর্বটা আমি সামলাতাম। রাজনীতিতে শোভন কোথায় পৌঁছেছিলেন ভাবুন! সেই শোভনের আজ কিচ্ছু নেই। আমি পাশে নেই, সব শেষ হয়ে গিয়েছে।

দলীয় কর্মসূচিতে রত্না চট্টোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: আপনার এই কথা যদি মেনেও নিই, তা হলেও কি এটা মানা সম্ভব যে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জামানত আপনি বাজেয়াপ্ত করিয়ে দিতে পারেন?

উত্তর: সে সব ভবিষ্যতে দেখা যাবে। যদি না পারি, তা হলে তখন এসে বলবেন— রত্নাদি কথা রাখতে পারলেন না, আপনি হেরে গেলেন। মেনে নেব। কিন্তু সে সব তো পরের কথা। দল আগে টিকিট তো দিক। আমাকে টিকিট দেওয়া হবে কি না, সেটাই তো এখনও জানি না।

প্রশ্ন: শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন করছেন যে, রত্না ওখানে কার নাম নিয়ে রাজনীতি করেন? রত্নার পরিচিতিটা কার নামে? শোভনদার এই প্রশ্ন কি ভুল? আপনি তো ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ‘বউদি’ হিসেবেই তো বেশি পরিচিত। মানে যে হেতু ‘কাননদার স্ত্রী’, সে হেতু সকলের বউদি।

উত্তর: না, আগে লোকে বউদিটা বেশি বলত। এখন দিদিভাইটাই বেশি বলে। অনেকে এখনও বউদি বলেন, তবে অধিকাংশই এখন দিদিভাই বলেন। কিন্তু তাতে আমার কোনও সমস্যা নেই। আমাকে বউদি বলুক, আমি তো চাই। আমি তো আইনত এখনও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী। তাঁর স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকতে আমার কোনও আপত্তি নেই। সেই জন্যই তো ওঁর ওয়ার্ড এখনও দেখভাল করছি। ওয়ার্ডের জন্য দাদা যা করে যাননি, সেগুলো বউদি করছেন।

প্রশ্ন: অর্থাৎ শোভন চট্টোপাধ্যায় যা যা বলেছেন, সেগুলোর মধ্যে একটা অন্তত আপনি মেনে নিতে বাধ্য হলেন।

উত্তর: না, আমি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করি না। আপনি আমাদের পর্ণশ্রীতে আসবেন। যে কোনও লোককে জিজ্ঞাসা করবেন, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি কোনটা? লোকে দেখিয়ে দেবে। আগে বাড়িটাকে লোকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি হিসেবে চিনত। এখন চেনে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি হিসেবে। আমাকে এখানকার রাজনীতি থেকে সরানোর জন্য কম চেষ্টা তো করেনি। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আমার মাথার উপর রয়েছে। শুধুমাত্র ওঁদের জন্যই আমি রাজনীতি করতে পারছি। অন্য কারও জন্য নয়।

প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেন যে, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জেলবন্দির মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে। শোভনদা কিন্তু উল্টো বলছেন। তিনি বলেছেন, আগেই বরং দমবন্ধ পরিস্থিতি ছিল। এখন অনেক শান্তিতে রয়েছেন, সাবলীল রয়েছেন।

উত্তর: তিনি ২২ বছর আমার সঙ্গে থাকলেন, বুঝতেই পারেননি যে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে গিয়েই বুঝলেন যে, দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আসলে বুঝবেন কী করে? অক্সিজেনটা তো আমিই দিয়ে রেখেছিলাম। আমি লন্ডন যেতেই অক্সিজেনের জোগান বন্ধ হয়ে গেল। তখন দমবন্ধ লাগতে শুরু করল। আসলে তখন তো কানের মধ্যে ঢোকানো শুরু হয়েছে— ইডি, সিবিআই, চিকু, রত্নার অবৈধ সম্পর্ক, গ্রেফতার, এ সব নানা কথা বলা শুরু হয়েছে। তাই দমবন্ধের কথা উঠল।

প্রশ্ন: আপনিই অক্সিজেন জোগাতেন মানে কী? এই কথার কোনও অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে?

উত্তর: কী আর বলব? যে জীবন শোভন চট্টোপাধ্যায় কাটাতেন, দিনের পর দিন সে সব তো সহ্য করে গিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যিনি অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলছেন, তিনি নিজে কত জনের সঙ্গে কী রকম সম্পর্ক রাখতেন! সে সব বললে মান-সম্মান থাকবে তো? টলি ক্লাব, আরসিজিসি বা পার্ক হোটেলে কাদের নিয়ে বসে থাকত? কাকে নিয়ে গঙ্গা কুটিরে চলে যেত? দুর্গাপুরে কোন গার্লফ্রেন্ডকে রেখে দিয়েছিল? শরৎ বসু রোডের বুটিক থেকে কার জন্য শপিং করত? রাজারহাটে কার ফ্ল্যাট সাজানোর জন্য হোম টাউনের সামন্ত ফার্নিচার থেকে আসবাবপত্র গিয়েছিল? আবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন— রত্না যেন না জানে। কেন? যদি মনে পাপ না থাকে, তা হলে রত্নাকে না জানানোর প্রশ্ন উঠেছিল কেন?

প্রশ্ন: এ সব কথা এত দিন পরে এসে বলছেন কেন? আপনি কি এ সব এত দিন পরে জানতে পারলেন? তখন কিছুই জানতেন না? কিছুই বুঝতে পারেননি?

উত্তর: সব জানতাম। জেনেও চুপ ছিলাম। কখনও কিছু বলিনি, এমন নয়। কিছু বললে শোভনবাবু বলতেন, ‘যেখানেই যাই, দিনের শেষে তো তোমার কাছেই ফিরে আসি।’ আমিও দেখতাম যে, হ্যাঁ ঠিকই, দিনের শেষে তো ফিরেই আসে। ওইটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝছি যে, সব জেনেও চুপ করে থাকাটাই আমার কাল হয়েছে।

প্রশ্ন: আপনি কখনও বলছেন, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মান-সম্মানের কথা ভেবে চুপ ছিলেন, কখনও বলছেন, গ্রেফতারি থেকে বাঁচানোর জন্য চুপ ছিলেন। তা হলে এখন কি আর সে সব ভাবছেন না?

উত্তর: না, আর ভাবছি না। আমার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তাতে আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। এ বার গ্রেফতার হলে হবে, আমার আর কোনও দায়িত্ব নেই। তবে জেনে রাখুন, এখনও সব বলিনি। চাইলে আরও অনেক কথা বলতে পারি। সবে ট্রেলার দেখালাম। গোটা ফিল্ম এখনও হাতে রয়েছে।

(রত্না চট্টোপাধ্যায়ের তোলা এই অভিযোগের বিষয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন: প্রথমত, আজকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আমি আগাগোড়া আমার ভাবমূর্তি সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। আমার ছেলে ঋষিই সে কথা স্বীকার করেছে। আমি যে বরাবর অতিরিক্ত বৈভবের জীবন এড়িয়ে চলার শিক্ষাই আমার পরিবারকে দিয়েছি, সেটা ঋষির মন্তব্যেই স্পষ্ট।

দ্বিতীয়ত, রত্না চট্টোপাধ্যায় এর আগে যে সব সাক্ষাৎকার নানা জায়গায় দিয়েছেন, সেগুলোয় তিনি দাবি করেছেন, তিনি স্বাধীনচেতা এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেন। এমন এক জন মহিলা শুধু আমার কথায় বিদেশে চিকিৎসা করাতে চলে গেলেন, আমরা কথায় মানসিক চিকিৎসা শুরু করিয়ে দিলেন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

তৃতীয়ত, রত্না চট্টোপাধ্যায় আজ অভিযোগ করেছেন যে, আমি অনেক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতাম। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় আদালতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়ে রত্না বলেছেন, ২২ বছরের দাম্পত্য জীবনে আমার বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। তা হলে কোনটা সত্য? সাংবাদমাধ্যমকে যা বলেছেন, তা সত্য হলে আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলেছেন।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement