গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আরজি করের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতা পুলিশ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। এ বার বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, আরজি করের নিহত মহিলা চিকিৎসকের ভিসেরাই বদলে দিয়েছে পুলিশ! বিশ্বস্ত সূত্র মারফত তিনি এই খবর পেয়েছেন বলে শনিবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এ কথা জানিয়েছেন শুভেন্দু।
বিরোধী দলনেতার এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, ভিসেরা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকিং, সিল বা লেবেলের কাজ পুলিশ করে না। পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই সেই সব কাজে। অটোপসি সার্জন ভিসেরা সংগ্রহ করেন। তাঁরাই সংরক্ষণ, প্যাকিং, সিল বা লেবেলিংয়ের কাজ করেন। পুলিশের কাজ হল, যে বাক্সে ভিসেরা সিল করা থাকে, সেই বাক্স মর্গ থেকে এফএসএল (ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি) বা কেমিক্যাল এগজ়ামিনারের কাছে নিয়ে যাওয়া। আর ভিসেরার বাক্সের সিল ভাল করে যাচাই করে দেখে নেওয়ার পরেই তা গ্রহণ করে এফএসএল। এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্তভার যে হেতু সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে, তাই ভিসেরার বাক্স সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সিবিআই ভিসেরার বাক্স নিয়েছে মানে তারা সন্তুষ্ট। এর মানে তারাও বাক্সের সিল ভাল করে যাচাই করে দেখেছে।’’
তবে শুধু ভিসেরাই নয়, শুভেন্দুর দাবি, তদন্তের নামে রক্ত লেগে থাকা আরও বেশ কয়েকটি জিনিসও বদলে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, ‘‘রক্ত লেগে থাকা জিনিসও যে বদলে দেওয়া হয়েছে, তা পুলিশি তদন্তের সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসের তালিকা দেখলেই বোঝা যায়। ডিএনএ পরীক্ষা করলেই তা বোঝা যাবে। হাত ধোয়ার বেসিনও বদলে ফেলা হয়েছে।’’ গোটা ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে দাবি করে অপরাধের ঘটনাস্থল নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, মহিলা চিকিৎসককে হাসপাতালের অন্য কোথাও খুন করে পরে সেমিনার হলে তাঁর দেহ স্থানান্তরিত করা হয়।
বিরোধী দলনেতার এই দাবি নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে ঘটনার পর থেকেই পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রকাশ্যে অনেকেই অনেক দাবি করেছিলেন। নানাবিধ ‘তত্ত্ব’ প্রকাশ্যে এসেছে। তাকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে লালবাজার। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল শুক্রবারই বলেছিলেন, ‘‘কখনও বলা হচ্ছে গণধর্ষণ হয়েছে, কখনও বলা হচ্ছে ঘটনাস্থল থেকে ১৫০ গ্রাম সিমেন পাওয়া গিয়েছে। কখনও আবার কোনও মহাপাত্র পদবিধারীকে বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পদবির সঙ্গে জুড়ে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ সব একেবারে ভুল কথা। প্রমাণ ছাড়া কোনও ধরনের গুজব ছড়াবেন না। আমাদের প্রমাণ দরকার। প্রমাণ ছাড়া কাউকে আমরা ধরতে পারি না। আমাদের কাউকে বাঁচানোর নেই। প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছি। দয়া করে গুজব ছড়াবেন না।’’ সিবিআই তদন্তের উপর ভরসা রাখার আর্জিও জানিয়েছিলেন কমিশনার।