পুলিশের গলায় দেশপ্রেমের গান। ছবি: ভাইরাল ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
বুধবার থেকে নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো। যেখানে দেখা যাচ্ছে সদ্য উত্তোলিত জাতীয় পতাকার পাশে পুলিশ কর্মীরা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গান গাইছেন। তাতে সমস্যা কিছু নেই। করোনাকালেও গান গেয়ে সচেতনতা প্রচারের কাজ করেছেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু এই পুলিশ বাজাচ্ছেন খোল। বাঁ-পাশে দাঁড়ানো এক অফিসারের হাতে করতাল। ডানপাশে দাঁড়ানো এক মহিলার হাতেও করতাল।
সমস্বরে সেই পুলিশবাহিনী গাইছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান, ‘মা গো, ভাবনা কেন? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে। তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি। তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি’। গানটি গাইছেন এক পুলিশ কর্তা। তাঁর গলায় ঝুলছে খোল। সেই খোলে তিনি অভ্যস্ত হাতে চাঁটি মারছেন। কখনও সখনও সামনে সারি বেঁধে দাঁড়ানো সহকর্মীদের দিকে হাত তুলে গলা মেলাতে উৎসাহও দিচ্ছেন।
আনন্দবাজার অনলাইন বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সেটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। রাজ্যের প্রতিটি জেলাপুলিশের কাছে ভিডিয়োটি পাঠিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে ঘটনাটি তাদের এলাকার কি না। কিন্তু সকলেই অন্য জেলার দিকে আঙুল তুলেছেন। সেই জেলা আবার আঙুল তুলেছে অন্য একটি জেলার দিকে। প্রাথমিক ভাবে ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে, সেটি কোনও জেলার পুলিশ লাইনে তোলা। যেখানে ঘটনাটি ঘটছে, তার আশেপাশে বড় বড় গাছ রয়েছে। এক পাশে একটি আবাসন রয়েছে। ভিডিয়োয় দু’টি শিশুকেও দেখা যাচ্ছে। তবে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না, ঘটনাটি কোন এলাকার। রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ অফিসার আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ঘটনাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে কেউই এর দায় নেবেন না। কারণ, খোল-করতালের সঙ্গে একটা ‘ধর্মীয় অনুষঙ্গ’ রয়েছে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘মানসিক বলবর্ধক গান হিসেবে গানটি গাওয়া হয়েছে। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু খোল-করতালটা না বাজালেও চলত। উর্দি পরিহিত পুলিশ খোল-করতাল বাজিয়ে গান গাইছে— এই দৃশ্যটা পুলিশের আইনরক্ষকের ভাবমূর্তির সঙ্গে যায় না।’’
প্রসঙ্গত, ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত পুলিশ অফিসার বা কর্মী গানটি গাইছেন এবং করতাল বাজাচ্ছেন, তাঁদের সকলেরই পরণে ‘সেরিমনিয়াল উর্দি’ রয়েছে। অর্থাৎ, স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের কোনও সরকারি কর্মসূচিতে যেমন উর্দি পরতে হয় ক্রস বেল্ট-সহ। সামনের দণ্ডে উড়ছে জাতীয় পতাকা। যা থেকে অনুমান যে, ওই ভিডিয়ো সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবস পালনের সময় তোলা হয়ে থাকতে পারে।
তবে ওই পুলিশ অফিসার এবং কর্মীরা রাজ্যের কোন থানা বা পুলিশ লাইনের, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। এমনকি, ছবির সঙ্গে সাদৃশ্য দেখে এক পুলিশ অফিসারকে আনন্দবাজার অনলাইন ফোন করায় তিনি সটান বলেছেন, ‘‘না-না, আমার গায়ের রং অতটা কালো নয়! ওটা আমি নই।’’
প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় এই গানটি লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। নিজের সুরে গানটি গেয়েছিলেন হেমন্ত। ১৯৬১ সালে প্রথম প্রচারিত এই গানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম প্রেরণাদায়ক ছিল বলেও জানা যায়। তবে এই বাংলাতেও যথেষ্টই জনপ্রিয় গানটি। একটা সময়ে কংগ্রেসের সভা-সমিতিতে নেতাদের ভাষণ শুরু হওয়ার আগে মঞ্চে এই গানটি কোরাসে গাওয়া হত।
তবে গত কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই গানের ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে খোল-করতাল বাজিয়ে পুলিশ কর্তাদের দেশাত্মবোধক গানের উপস্থাপনার ফলেই।