—ফাইল চিত্র।
নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠে মালদহ বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেই স্কুলেরই চার ছাত্রীর গালিগালাজ করে তৈরি গানের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শুক্রবার হইচই পড়ে গিয়েছে জেলা জুড়ে। হতবাক স্কুলের শিক্ষিকা থেকে শুরু করে প্রাক্তনী এবং অভিভাবকেরাও। তাঁদের দাবি, বার্লো বালিকা বিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে জেলায়। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে একাধিক বার রাজ্যের মেধা তালিকায় ঠাঁই হয়েছে স্কুলের। সেই স্কুলেরই ছাত্রীদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ শিক্ষা মহলের একাংশও।
ওই ছাত্রীদের দু’জন অবশ্য এ দিন সন্ধেয় সংবাদমাধ্যমকে জানায় যে তারা ক্ষমাপ্রার্থী। সেখানে তারা দাবি করে, মজা করে ভিডিয়ো বানালেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনিচ্ছাকৃত ভাবেই তা পোস্ট হয়ে যায়। তারা আদৌ সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে স্কুলের এবং সহপাঠীদের ‘বদনাম’ বা ‘অপমান’ করতে চায়নি। কী ভাবে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে সে বিষয়ে তাদের কোনও ধারণাই নেই। ভবিষ্যতেও তারা এমন কাজ করবে না বলেই জানায়।
১৮৭১ সালে মালদহে প্রতিষ্ঠা হয় মেয়েদের স্কুলের। ১৮৮৭ সালে ভাগলপুর ডিভিশনের কমিশনার জিএস বার্লো কর্মরত অবস্থায় মারা যান। সেই সময় মালদহবাসী বার্লো স্মৃতি রক্ষা কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি বিদ্যালয়ের জন্য ৫০০ টাকা দান করে। সেই থেকে ওই স্কুলের নাম হয়ে যায় বার্লো বালিকা বিদ্যালয়। প্রথমে অস্থায়ী ভবনেই চলেছিল স্কুল। ১৯০১ সালে বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন তৈরি হয়। ১৯৩৬ সালে মহানন্দা নদী সংলগ্ন মকদমপুর রোড এলাকায় স্কুলের জন্য জমি কেনা হয়। ১৯৭৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত হয় স্কুলটি। এখন সার্ধ শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের দোরগোড়ায় মালদহ বার্লো উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
তার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিয়োয় হইচই পড়ে গিয়েছে জেলা জুড়ে।
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে পরনে স্কুলের পোশাক, গলায় ঝুলছে স্কুলের নাম লেখা ব্যাজ। কিছু গালিগালাজ জুড়ে গান করছে চার কিশোরী। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের বাইরে ভিডিয়োটি তোলা হয়েছে। তবে স্কুল সংলগ্ন এলাকাতেই। ইতিমধ্যে ওই কিশোরীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। ছাত্রীদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আমাদের তরফে যা করণীয় করা হবে।’’
এ দিকে, জেলার প্রথম সারির স্কুলের মেয়েদের এমন কাণ্ডে হতবাক প্রাক্তনী থেকে শুরু করে অভিভাবক, শিক্ষা মহল। তাঁদের একাংশের দাবি, ওই ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে রবীন্দ্রভারতীতে ছাত্রীদের অশ্রাব্য গানের ভিডিয়োর পরে বার্লোর ছাত্রীদের ভিডিয়ো নিয়ে হইচইয়ে সমাজতত্ত্ববিদদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, ছেলেদের মুখে যে সব লব্জ বেশিই শোনা যায়, মেয়েদের মুখে সে সব কথা আচমকা শুনেই নীতিপুলিশির ঝড় বেশি করে উঠছে না তো?