পশ্চিমবঙ্গে অ্যাসিড হানার মামলায় ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কখনও ১২-১৩ লক্ষের বেশি হয়নি। প্রতীকী ছবি।
চোখের দৃষ্টি খুইয়েছেন অ্যাসিড-হানায়। কিন্তু চাকরি পাওয়া দূর অস্ত্, রিষড়ার ঝুমা সাঁতরা তিন লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাননি। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, অ্যাসিড-হানায় আহতদের কারও জন্য ক্ষতিপূরণের কোনও ঊর্ধ্বসীমাই থাকতে পারে না। অ্যাসিড-হানায় গুরুতর আহত এক মহিলাকে সম্প্রতি ৩৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে উত্তরাখণ্ড হাই কোর্ট। অথচ পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের মামলায় ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কখনও ১২-১৩ লক্ষের বেশি হয়নি।
‘না-পাওয়া’র ক্ষোভে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরব হলেন এ রাজ্যে অ্যাসিড-হানায় নির্যাতিতেরা। তাঁদের মধ্যে মেয়েরাই দলে ভারী। তবে পাঁচ শতাংশ পুরুষও আছেন। রয়েছে কিশোর বয়সের সুরজিৎ কামাল। বিরাটি স্টেশনে মায়ের পাশে শুয়ে থাকার সময় হামলায় ক্ষতবিক্ষত ছেলেটি পুড়ে যাওয়ার গ্লানিতে স্কুল থেকে ছিটকে গিয়েছে।
পুড়ে গিয়েও হার না-মানা এই ধরনের মুখগুলি এ দিন জড়ো হয়েছিলেন দিল্লিতে অ্যাসিড-হানার শিকার সাহিন মালিকের গড়ে তোলা একটি মঞ্চের ছায়ায়। জাতীয় স্তরের সাম্প্রতিকতম নথি অনুযায়ী (এনসিআরবি), গোটা দেশে অ্যাসিড-হানায় এগিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গই। কিন্তু অপরাধের বিচার থেকে নির্যাতিতাদের ক্ষতিপূরণ, সামাজিক সহায়তার ছবিটা এ রাজ্যে মোটেই উজ্জ্বল নয়। দেশের কোথাও খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি এখনও বন্ধ করা যায়নি। সাহিন বলছিলেন, ‘‘হরিয়ানায় নির্যাতিতার বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের যাবতীয় খরচ বহন করে সরকার। অ্যাসিড-হানার শিকার হলে পঞ্জাব, হরিয়ানায় নির্যাতিতাদের মাসে আট হাজার টাকা দেওয়া হয়। অ্যাসিড-হানায় আহতদের জন্য পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্তরে আরও বেশি সক্রিয়তা দরকার।’’
তেহট্ট, বেলডাঙা বা সাগর থেকে অ্যাসিড-হানায় আহত কেউ কলকাতায় হাই কোর্টে এলে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন সে-দিনেই। উত্তরবঙ্গের কেউ এলেও সে-দিনেই তাঁদের ফেরার ট্রেনে উঠতে হয়। অ্যাসিড-আক্রান্তেরা যাতে কলকাতায় নিখরচায় থাকতে পারেন, সেই জন্য একটি হোম গড়ে তোলার আর্জিও এ দিন জানালেন ভুক্তভোগীরা।
মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ প্রাক্তন স্বামী গলায় অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার পরে এখনও পেট ভরে খেলে বা চেঁচিয়ে কথা বললে গলায় কষ্ট হয় বেলডাঙার আঙুরা বিবির। কাহিল শরীরে বেশি ক্ষণ কাজ করতে পারেন না। অথচ মাত্র তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তিনি। এ দিন অন্য ভুক্তভোগীদের মধ্যে তিনিও নিজের কথা বলেছেন। ২০০৪ সালে পারিবারিক বিবাদে নির্যাতিতা তেহট্টের মমতা সরকার এখনও সুবিচার পাননি। সুন্দরবনের পম্পা দাসও স্বামীর নির্যাতনের শিকার বলে অভিযোগ। পম্পা বা মনীষা পৈলান কেউ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাননি। সাজা পায়নি তাঁদের মামলায় অভিযুক্তেরা।
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘ক্ষতিপূরণ আর সুবিচার এই নির্যাতিতাদের অধিকার।’’ বাস্তব বলছে, জীবনের ঝড়ঝাপটা নির্যাতিতাদের মুখের হাসি মুছতে পারেনি। তাঁদের লড়াইয়ের শরিক অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় নাটকে, নাচে মেতে ওঠেন তাঁরা। ফুটে ওঠে এ জীবন দহনদানে পূর্ণ করার অঙ্গীকার।