Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ইস্তফা দেন আলিয়ার উপাচার্য, সেটি গৃহীতও হয়েছিল

মুখ্যমন্ত্রীকে উপাচার্য লিখেছিলেন, ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। নৈতিক দায় নিয়ে পদ থেকে সরে যেতে চাই আমি।’

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ১৯:২৬
Share:

গত বছরের ২২ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন মহম্মদ আলি।

গত বছরের ২২ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন মহম্মদ আলি। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে তাঁর বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। তিনি বিধিবদ্ধ ইস্তফাপত্রও পাঠাবেন।

Advertisement

তবে ওই চিঠি সম্পর্কে আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর প্রতিক্রিয়া এবং বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, চিঠিটি উনি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও জবাব আসেনি।

মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সরাসরি জবাব না-এলেও একমাস পর, ২২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশেষ সচিব উপাচার্যকে লেখা একটি চিঠিতে তাঁর ২২ নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি এবং ইস্তফার উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, উপাচার্যের অনুরোধ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি যেন অবিলম্বে বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ মারফত তাঁর আনুষ্ঠানিক ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন। গত কয়েকদিনের ঘটনাবলি অবশ্য বলছে, উপাচার্য সেই বিধিবদ্ধ ইস্তফাপত্র পাঠাননি। তিনি তাঁর পদেই ছিলেন। নচেৎ তাঁকে ঘিরেই গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল হত না আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তাল হত না রাজ্যের রাজনীতিও।

Advertisement

তবে ওই বিষয়ে সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে উপাচার্য বলেন, ‘‘আমি তো চিঠি লিখেছিলাম মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে তো তার জবাবি চিঠি আসেনি! চিঠি এসেছিল দফতর থেকে।’’ অর্থাৎ, প্রকারান্তরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বোঝাতে চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ বা অনুমতি দিতেন, তা হলে তিনি তা করতেন। দফতর বলায় তিনি তা করেননি।

পাশাপাশিই, উপাচার্য আরও জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ঘটনা সম্পর্কে তিনি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল (যিনি রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য) এবং সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরকে লিখিত রিপোর্ট দেবেন।

২২ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠিতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লিখেছিলেন, ১৮ নভেম্বর রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন এবং আখরুজ্জামান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আকস্মিক পরিদর্শনে’ গিয়েছিলেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সেখানে এসেছিলেন। ওই মন্ত্রীরা পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দু’জন প্রতিনিধির সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন। সেই আলোচনা যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই হয়েছিল।

মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি

চিঠিতে উপাচার্য লিখেছিলেন, আলোচনার পর যখন মন্ত্রীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরোচ্ছেন, তখন এক বহিষ্কৃত ছাত্রের নেতৃত্বে কিছু ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথে স্লোগান দিতে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আধিকারিকের বয়ান অনুযায়ী, মন্ত্রীদের গাড়ি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোচ্ছিল, তখন পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস থেকে কিছু ছাত্র সেখানে এসে পৌঁছয়। তাদের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে মন্ত্রীদের কনভয় মিনিটখানেকের জন্য থমকে দাঁড়ায়। তার পরে অবশ্য মন্ত্রীরা বিনা বাধায় বেরিয়ে যান।

ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উপাচার্য লিখেছিলেন, ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। ওই ঘটনার নৈতিক দায় নিয়ে আমার পদ থেকে আমি সরে যেতে চাই। বিশেষত, যেহেতু ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের মধ্যে ঘটেছে। গত দেড় বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যা ঘটছে, তার পরে আমার আর উপাচার্য পদে থাকা সমীচীন নয় বলেই আমি মনে করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য কোনও কাজ করতে পারব বলে মনে করি না।’

চিঠির একেবারে শেষে উপাচার্য লিখেছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমি পদত্যাগ করতে চাই। আপনাকে অনুরোধ, যথাসম্ভব দ্রুত আমার ইস্তফা গ্রহণ করুন। যাতে আমি আবার আমার পুরনো কাজের জায়গায় ফিরে যেতে পারি। আমার বিধিবদ্ধ ইস্তফাপত্র আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দেব।’

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার পরে সরকারের তরফে উপাচার্যকে চিঠি লিখে বিধিবদ্ধ ইস্তফা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তেমন কিছু করেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement