অভিযোগ, স্কুলের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে যে-সব সাফাইকর্মী ও দারোয়ান নিয়োগ হচ্ছে, তাঁদের বেতন কম। প্রতীকী ছবি।
স্কুল সাফসুতরো রাখার জন্য চাই সাফাইকর্মী। কিন্তু সাফাইকর্মীর পদ নেই অধিকাংশ স্কুলে। স্কুলের সুরক্ষা দেখার দায়িত্ব দারোয়ানের। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলে নেই রক্ষীর পদও। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাম্প্রতিক নির্দেশ, আগামী শিক্ষাবর্ষ ও মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে।
কী রকম উন্নয়ন? সংশ্লিষ্ট সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সামগ্রিক ভাবে স্কুল-চত্বর তো বটেই, বিশেষত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৌচালয়। স্কুল থেকে যাতে কোনও ভাবে ডেঙ্গি বা মশাবাহিত অন্য কোনও রোগ ছড়িয়ে পড়তে না-পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের পানীয় জল, বিদ্যুৎ, সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মতে, স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখার দায়িত্ব যেমন সাফাইকর্মীর, একই ভাবে স্কুলের নিরাপত্তার দিকটা দেখার ভার দারোয়ানদের। কিন্তু এই দুই শ্রেণির কোনও কর্মী-পদই নেই বেশির ভাগ স্কুলে। কিছু কিছু স্কুল নিজস্ব তহবিল থেকে দারোয়ান ও সাফাইকর্মী নিয়োগ করে। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, শুধু নির্দেশিকা জারি করলেই হবে না। নির্দেশিকা অনুযায়ী স্কুল চালাতে হলে অবিলম্বে সাফাইকর্মী ও দারোয়ান নিয়োগ করা দরকার।
অভিযোগ, স্কুলের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে যে-সব সাফাইকর্মী ও দারোয়ান নিয়োগ হচ্ছে, তাঁদের বেতন কম। অনেকই তাই নিয়মিত কাজ করেন না। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “গ্রামাঞ্চলে অনেক স্কুলের পাঁচিল পর্যন্ত নেই। যে-সব স্কুলে আছে, সেখানেও পাঁচিল টপকে হামেশাই ঢুকে পড়ে বাইরের লোক। দেখা যায়, রাতে বাইরের লোক স্কুলের শৌচালয় ব্যবহার করে নোংরা করছে। পরের দিন সকালে শৌচালয় পরিষ্কার না-করায় অনেক ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা সেই সব শৌচালয় ব্যবহার করতে পারছে না। স্কুলের মাঠে রাতে মদ খাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরের দিন স্কুলের মাঠে মদের বোতলও পড়ে থাকতে দেখা যায়।” প্রশ্ন, শৌচালয় বা স্কুলমাঠ কে সাফ করবে? ঝাড়ুদারই তো নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে স্কুলের বিদ্যুৎ-সংযোগ ঠিক রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু তাঁদের স্কুলের বাইরের বারান্দায় আলো লাগালেই চুরি হয়ে যায়। কত বার নিজেদের খরচে আলো কিনে লাগানো যাবে? প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন, ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “স্কুলে টাকাপয়সা না-থাকলেও চোরের উপদ্রব আছে। কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, আলমারিতে থাকা সামান্য টাকাও চুরি হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা নিয়েও চলে যাচ্ছে চোর। ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে সিসি টিভি। ফলে কে বা কারা চুরি করতে এসেছিল, তা বোঝা যাচ্ছে না।” মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর যে-নির্দেশ দিয়েছে, সেটাই আমাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে। স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে শিক্ষকদের যদি অভিযোগ বা পরামর্শ থাকে, তা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা জেলার শিক্ষা দফতরকে জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’