জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু তিনি এখন যে দফতরের মন্ত্রী, সেই বন বিভাগেও গরমিলের অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। একই সঙ্গে মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দফতরের বিপুল কর্মকাণ্ডই বা সামলানো হবে কী ভাবে?
রাজ্য বন দফতরের অধীনে বন সহায়ক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল আগের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই। রাজীব যখন বিজেপিতে যান, তখন সেই দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। ২০২০ সালের সেই চুক্তিভিত্তিক বন সহায়ক পদে নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়। নতুন করে ইন্টারভিউয়ের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এর মধ্যে রাজীব তৃণমূলে ফেরেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত গতি হারায় বলে অভিযোগ। শেষে চলতি বছর মে মাসে আদালত নির্দেশ দেয়, দু’মাসের মধ্যে পুরনো প্যানেল বাতিল করে ইন্টারভিউ নিতে হবে। সেই মতো আবেদনপত্র জমার সময়েই ফের দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। পুজোর পরে, পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু এখন আর সে প্রক্রিয়া এগোবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ঘনিয়েছে।
জ্যোতিপ্রিয় বনমন্ত্রী হওয়ার পরেও নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। বেশ কিছু এলাকায় গাছ কাটা নিয়ে বিতর্ক হয়। অভিযোগ ওঠে বনসৃজনের কাজ নিয়েও। তা ছাড়া, গত দেড় বছরে বন দফতরের বিভিন্ন জমি বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকাতেও নির্মাণে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ সবের নেপথ্যেও নানা প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আছে।
একই সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পরে দফতরের কাজকর্ম নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশেষত, বন্যপ্রাণী এবং মানুষের সংঘাত এড়াতে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র করে ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। সে কাজ শেষের পথে। নতুন কেউ দায়িত্ব নিলে সেই পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট হবেন কি না, চিন্তা রয়েছে দফতরে। গন্ডারের বিচরণভূমি হিসেবে উত্তরবঙ্গে রামসাইকে চিহ্নিত হয়েছিল। জ্যোতিপ্রিয় বনমন্ত্রী হয়ে দ্রুত জমি হস্তান্তর করে কাজ শুরু করেছিলেন। তার ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হল সংশয়।
বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা অবশ্য দফতরের কাজ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘বাংলায় বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে এঁটে উঠতে না পেরে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে নানা ভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা করছে।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুন্ডুর পাল্টা, ‘‘উপযুক্ত তদন্ত হলে বন দফতরের নানা দুর্নীতিও প্রকাশ্যে আসবে।’’
(সহ-প্রতিবেদন: অনির্বাণ রায়)