সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে দীর্ঘ দু’মাসের ছুটিতে শিক্ষা শিবির পড়ুয়াদের ক্ষতির আশঙ্কা তো করছেই। বিপাকে পড়ে গিয়েছেন শিক্ষকপদে যোগ দিতে যাওয়া বহু তরুণ-তরুণীও। হবু শিক্ষকদের অভিযোগ, ৮ মে অর্থাৎ বুধবার তাঁদের নিয়োগপত্র পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক আগে গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় তাঁরা সময়মতো নিয়োগপত্র পাননি। নতুন করে নিয়োগপত্র পেয়ে কবে তাঁরা স্কুলে যোগ দেবেন, সেই বিষয়ে ফের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
বিকাশ ভবন থেকে এ দিন ৫৭ জন নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগপত্র পাওয়ার কথা ছিল। ওই প্রার্থীদের অভিযোগ, নানা কারণে তাঁদের নিয়োগ ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) থেকে সুপারিশপত্র পান। সেই চিঠি পাওয়ার ছ’সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগপত্র পেয়ে তাঁদের স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই নিয়োগপত্র পেতে পেতে জানুয়ারি হয়ে যায়।
ওই প্রার্থী বলেন, ‘‘জানুয়ারিতে নিয়োগপত্র পেয়ে কাটোয়ার একটি স্কুলে যোগ দিতে গিয়ে দেখি, ওখানে আমার বিষয়ে পদ খালি নেই। ফলে আমার নিয়োগ পিছিয়ে যায়।’’ তিনি জানান, এপ্রিলে শিক্ষা দফতর থেকে তাঁদের জানানো হয়, নতুন নিয়োগপত্র দেওয়া হবে ৮ মে। তার সাত দিনের মধ্যে নতুন স্কুলে যোগ দিতে হবে। কিন্তু গত সোমবার তাঁকে ফের ফোন করে জানানো হয়, স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। ৮ তারিখে নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে না। ওই প্রার্থীর প্রশ্ন, বারবার তাঁদের নিয়োগ পিছিয়ে যাচ্ছে কেন? এতে তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কর্মজীবনের মেয়াদও কমছে।
উত্তরবঙ্গের এক প্রার্থী বলেন, ‘‘আমাকেও ভুল স্কুলে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। সেটা বাতিল হওয়ার পরে ৮ মে নতুন নিয়োগপত্র দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সেই আশায় বসে ছিলাম। কিন্তু ফোন করে বলা হল, গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় নিয়োগপত্র দেওয়া যাবে না। ফলে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’’
৫৭ জন প্রার্থীর মধ্যে কয়েক জন এ দিন বিকাশ ভবনে যান। তাঁরা জানান, বিকাশ ভবন থেকে তাঁদের জানানো হয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও গরমের ছুটি চলছে। নিয়োগপত্র এখন দেওয়া যাবে না।
এই নিয়ে সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলিও। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারের এই খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের ফলে যাঁরা চাকরিতে যোগ দিতে মানসিক প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন, তাঁদের আশা হোঁচট খেল। এই আর্থিক ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে?’’
এসএসসি-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘‘আমাদের কাজ সুপারিশপত্র দেওয়া। সেই কাজ করেছি। নিয়োগপত্র দেওয়া আমাদের দফতরের এক্তিয়ারে নেই।’’ বিকাশ ভবনে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। গরমের ছুটির পরে স্কুল খুললেই হবু শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।
এর মধ্যেই স্কুলে দীর্ঘ ছুটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে জেলার স্কুল পরিদর্শকদের স্মারকলিপি দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘ভোটের জন্য অনেক স্কুলে প্রথম সামেটিভ টেস্ট হয়নি। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে অনেক স্কুলে দ্বিতীয় সামেটিভ হবে। এত দীর্ঘ ছুটি থাকলে অধিকাংশ স্কুলই পাঠ্যক্রম শেষ করতে পারবে না।’’ ছুটি ছাঁটাইয়ের দাবিতে জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ি স্কুলের পড়ুয়ারা মঙ্গলবার পথ অবরোধ করে। এ দিন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের ধলপলে রাস্তায় নামে স্কুলপডুয়ারা। মালদহের ইংরেজবাজারে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম প্রভাবিত এবিটিএ।