অপেক্ষা: তপোবন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া কর্মীদের পরিজন। সোমবার উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে। পিটিআই
সকালে দুই ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছিল বাবার। তার পরে ছেলেরা গিয়েছিল কাজে। আর বাবাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বাড়িতে।
বেলার দিকে ছেলের কর্মস্থল থেকে এলাকার এক যুবকের ফোনে উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ হড়পা বানের কথা জানতে পারেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের লক্ষা গ্রামের বাসিন্দা ধ্রুবগোপাল জানা। তার পর থেকেই গত ২৪ ঘণ্টায় আর চোখের পাতা এক করতে পারেননি জানা পরিবারের সদস্যেরা। এই পরিবারেরই দুই ছেলে লালু এবং বুলু জানা কাজ করতে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের তপোবন এলাকার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে। হিমবাহ ভেঙে হড়পা বানের পর থেকে ওই দু’জনের কোনও খোঁজ নেই। মোবাইলও পরিষেবা সীমার বাইরে।
একই অবস্থা মহিষাদলের গুড়িয়া পরিবারেও। এই পরিবারের সদস্য সুদীপ কাজ করতেন ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে। তিনিও নিখোঁজ। খোঁজ নেই পুরুলিয়ার আড়শা থানা এলাকার বাগানডি গ্রামের দুই যুবক শুভঙ্কর তন্তুবায় এবং অশ্বিনী তন্তুবায়েরও।
নিখোঁজ যাঁরা: বাঁ দিক থেকে অশ্বিনী তন্তুবায়, শুভঙ্কর তন্তুবায়, সুদীপ গুড়িয়া, লালু জানা ও বুলু জানা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মহিষাদলের লালু ঠিকাদারি করেন। ভাই বুলুকে নিয়ে বছর দুয়েক আগে উত্তরাখণ্ডের ঋষিগঙ্গা প্রকল্পে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। লালুর হাত ধরেই বছর খানেক আগে চক দ্বারবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সুদীপও উত্তরাখণ্ডে যান। রবিবার দুপুরে তাঁদের কর্মস্থলই ভয়ানক হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে।
সোমবার লালুর বাবা ধ্রুবগোপাল বলেন, ‘‘রবিবার সকালে শেষ বারের মতো ওদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। বলেছিল, পাওয়ার প্রজেক্টের ভিতরে কাজ রয়েছে। এখন ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।’’
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরার কথা ছিল আরও এক নিখোঁজ সুদীপের। শনিবার রাতেই তিনি কথা বলেছিলেন বৌদির সঙ্গে। শিখেছিলেন কী ভাবে গোল করে আলু কেটে ভাজতে হয়। সুদীপের দাদা প্রদীপ গুড়িয়া বলেন, ‘‘শনিবার রাতে ভাই ওর বৌদিকে ফোনে বলল, কী ভাবে গোল করে কেটে আলু ভাজতে হয় শিখিয়ে দাও। আর রবিবার থেকেই ওর কোনও খবর পাচ্ছি না।’’
নিখোঁজ প্রত্যেকেই থাকতেন তপোবন এলাকায়। তাঁদের সঙ্গেই থাকতেন মহিষাদলের ইছাপুরের বাসিন্দা বুদ্ধদেব সামাই। ভাগ্যের জোরে রবিবার প্রাণে বেঁচেছেন বুদ্ধদেব। বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘ঋষিগঙ্গা পাওয়ার প্রজেক্টের অনেকটাই ওপরে তপোবন এলাকাতে আমরা থাকতাম। রবিবার সকালে অন্য সহকর্মীরা কাজে গেলেও আমি যাইনি। সকাল ১০টার সময় দেখলাম প্রবল স্রোত আছড়ে পড়ছে। আমাকে আপাতত জোশীমঠে রাখা হয়েছে।’’
মহিষদলের উদ্বিগ্ন পরিবারগুলি আপাতত থানা, বিডিও অফিস, পঞ্চায়েতে নিখোঁজদের উদ্ধারের আবেদন জানিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ বলেন, ‘‘মহিষাদলের তিন যুবক উত্তরাখণ্ডে নিখোঁজ। সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি।’’ জেলাশাসকের বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘দুই রাজ্যের মধ্যে কথা হচ্ছে।’’
অন্য দিকে, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে খবর মিলেছে, আড়শার বাগানডি গ্রামের শুভঙ্কর তন্তুবায় ও অশ্বিনী তন্তুবায় নিখোঁজ।’’ নিখোঁজদের পরিবার সূত্রের খবর, দু’জনই লকডাউনে বাড়ি ফিরেছিলেন। পুজোর আগে আবার চলে যান। শুভঙ্করের বাবা ভজহরি তন্তুবায় বলেন, ‘‘দিন সাতেক আগে ফোনে কথা হয়েছিল। এখন আর ফোনে পাচ্ছি না।’’
অশ্বিনীর স্ত্রী এবং এক বছরের সন্তান রয়েছে। তাঁর দাদা সহদেব বলেন, ‘‘রবিবার সকালে ভাইয়ের সঙ্গে এক বার কথা হয়েছিল। যে ঠিকাদারের মারফত ওরা গিয়েছিল, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও কিছু বলতে পারছেন না।’’