গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কয়েক দিন আগেই মুম্বইয়ের বাসিন্দা অশীতিপর বৃদ্ধের মোবাইলে একটি মেসেজ ঢোকে। আপাত ভাবে মনে হয়, যে বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট, সেখান থেকেই মেসেজ পাঠানো হয়েছে। লেখা রয়েছে, কেওয়াইসি আপডেট করা হয়নি বলে তাঁর অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হবে। মেসেজের শেষে ব্যাঙ্ক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া।
বাড়ির বাইরে কোভিডের আতঙ্ক। ঘরবন্দি বৃদ্ধ। ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার উপায় নেই। অথচ অ্যাকাউন্টের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে লকডাউনের মধ্যে বিপদের মধ্যে পড়বেন। তাই উপায় না দেখে মেসেজে উল্লেখ করা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন ওই বৃদ্ধ। ওই মোবাইল নম্বর সেভ করলে দেখা যাচ্ছে হোয়াটস্অ্যাপে ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) হিসাবে রয়েছে ওই ব্যাঙ্কের লোগো। ফলে, বৃদ্ধের কোনও সন্দেহ হয়নি। এর পর...? এক ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধের ব্যাঙ্ক থেকে গায়েব হয়ে যায় ৩৮ লাখ টাকা। বৃদ্ধের যাবতীয় সঞ্চয় ওই টাকা।
কেবলমাত্র ওই বৃদ্ধ নন। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত-সহ পশ্চিম ভারতের কয়েকটি রাজ্যে গত তিন সপ্তাহে লকডাউন চলাকালীন সময়ে প্রায় তিন ডজন ব্যাঙ্ক গ্রাহক একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রতারকদের লুটের পরিমাণ কোটির কম নয় বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
তদন্তে নেমে দেখা যায়, প্রতারণার পদ্ধতিতে বিশেষ কোনও নতুনত্ব নেই। কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাংয়ের প্রতারণার ধরন বা পদ্ধতির সঙ্গে ৯০ শতাংশ মিল রয়েছে ওই প্রতারণার। কিন্তু তার পরেও তদন্তকারীদের চিন্তা বেড়েছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত যে ক’টি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে গত তিন সপ্তাহে, তাতে প্রাথমিক ভাবে হদিশ পাওয়া গিয়েছে ৩০টির মতো মোবাইল নম্বরের। আর সব ক’টি মোবাইল নম্বরই এ রাজ্যের অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা সংলগ্ন এলাকা থেকে কেনা হয়েছে সিমগুলি। সব ক’টি সিমকার্ডই একটি বিশেষ টেলিকম সংস্থার।
আরও পড়ুন: ৪ কর্মী করোনায় আক্রান্ত, সাগর দত্ত হাসপাতালে ক্রমশ বাড়ছে সঙ্কট
সূত্রের খবর, তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ যোগ উঠে আসার পরেই মহারাষ্ট্র, গুজরাত-সহ বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ যোগাযোগ করেছে এ রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি পেটিএম-এও একই কায়দায় প্রতারণা হয়েছে। সেখানেও সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, প্রতারণায় ব্যবহার করা মোবাইল নম্বরগুলি এই রাজ্যের। পেটিএম প্রতারণায় জামতাড়া গ্যাংয়ের বেশ কয়েক জনকে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তার পরেও এখনও চলছে প্রতারণা। এবং মোবাইল সূ্ত্র ধরে সেই প্রতারণার যোগ পাওয়া যাচ্ছে এ রাজ্যেই।
তবে কি জামতাড়া গ্যাংয়ের মতো কোনও গ্যাং সক্রিয় হয়েছে এই রাজ্যে?
তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, জামতাড়া গ্যাংয়ের প্রতারণার কায়দা আয়ত্ত করে এ রাজ্যেই হয়তো তৈরি হয়েছে নতুন কোনও চক্র। কিন্তু তদন্তকারীদের অন্য একটি অংশ জানাচ্ছেন আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘সিম কার্ড পশ্চিমবঙ্গের। কিন্তু সিমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রতারণার সময় সিমগুলো বাংলা-ঝাড়খণ্ড এবং বাংলা-বিহার সীমানা এলাকায় সক্রিয় ছিল।” আর সেখান থেকেই অন্য একটি আশঙ্কার কথা মাথায় আসছে গোয়েন্দাদের। পেটিএম প্রতারণার ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে প্রতারকদের সিম পশ্চিমবঙ্গের কিন্তু সক্রিয় দেওঘর এলাকা থেকে। তা হলে, জামতাড়ার মতোই নতুন কোনও গ্যাং তৈরি হয়েছে? তদন্তকারীদের আশঙ্কা সেই নতুন গ্যাংয়ে শামিল রয়েছে এ রাজ্যের যুবকরাও।
দীর্ঘ দিন ধরে এই ধরনের প্রতারণার তদন্তে যুক্ত এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘একেই জামতাড়া গ্যাং নিয়ে আমরা নাজেহাল। তার পর যদি দুই রাজ্যের দুষ্কৃতীরা মিলে নয়া গ্যাং তৈরি করে তা হলে লাফিয়ে বাড়বে এই প্রতারণা।” আপাতত লকডাউনের মধ্যে প্রতারকদের নাগাল পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না পুলিশ। তবে লক ডাউন উঠলেই নয়া এই গ্যাংই পুলিশের পয়লা টার্গেট।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)