n দুয়ারে টিকা: বয়স্ক ও অসুস্থদের এই ভাবেই টিকা দেওয়া চলছে জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল
কেউ বলছে, করোনার তৃতীয় ঢেউ এসে গিয়েছে। কেউ কেউ বলছে, সে আসি-আসি করছে। এই অবস্থায় ওই ঢেউয়ের মোকাবিলায় নিয়মিত মাস্ক পরা আর টিকাকরণ কর্মসূচিকেই মূল হাতিয়ার করতে চায় রাজ্য প্রশাসন। বিশেষত মাস্ক না-পরলে জরিমানা করার বিষয়ে প্রশাসনকে কড়া হতে হবে বলে শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনে রাজ্য প্রশাসনের বৈঠকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সব জেলারই প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মাস্ক পরার ক্ষেত্রে শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না।
বৈঠকে সব জেলাকে জানানো হয়েছে, মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে পুলিশকে দিয়ে নজরদারি চালাতে হবে। চালাতে হবে ‘নাকা চেকিং’-ও। প্রয়োজনে জরিমানা করা হবে।
একই ভাবে জোর দিতে হবে টিকা প্রদানেও। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা, অর্থসচিব মনোজ পন্থ, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমেরা এ দিন সব জেলাশাসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গেও ভিডিয়ো-সম্মেলন করেন। নিগম বলেন, ‘‘তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং টিকাকরণে বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে।’’
টিকা জোগানের অব্যবস্থা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিসংখ্যানও বলছে, অনেকেরই দ্বিতীয় ডোজ় বকেয়া। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে প্রতিটি জেলায় কত দ্বিতীয় ডোজ় বাকি, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। মুখ্যসচিব তাই দ্বিতীয় ডোজ় টিকার উপরে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। টোকেন বিলিয়ে টিকাদানে স্বচ্ছতা আনার দিকেও খেয়াল রাখার জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। সব জেলার বস্তি, শহরের উপান্তেতেও টিকা প্রদানে জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব। সব জায়গাতেই সকলে যাতে মাস্ক ব্যবহার করেন, সেই বিষয়ে এ বার কড়া পদক্ষেপ করার কথাও জানানো হয়েছে বৈঠকে। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, অনেক জায়গাতেই ফের মাস্ক ব্যবহারে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ঢিলেঢালা মনোভাব তৈরি হয়েছে। তাতেই উদ্বেগ বাড়েছে। এই অবস্থায় মাস্ক ব্যবহারে শিথিলতা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করতে রাজি নয় প্রশাসন। রাজ্যের প্রতিটি পর্যটনস্থল, হোটেলে কোভিড বিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গে। বৃহস্পতিবার ‘গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি কমিটি’র বৈঠকেও উত্তরবঙ্গে বিশেষ সতর্কতার বিষয়টি উঠেছিল। কারণ, উত্তর-পূর্ব ভারতে সংক্রমণ বাড়ছে। আর সেখান থেকে এ রাজ্যের মূল প্রবেশপথ হল উত্তরবঙ্গ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের মাস্ক পরার উপরে কড়া নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে।
রাজ্য ইতিমধ্যে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। কমছে মৃতের সংখ্যাও। তবে স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, কয়েকটি জেলায় প্রায় প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যু হচ্ছে। কেন সেখানে এমন ঘটনা ঘটছে, এ দিন সংশ্লিষ্ট জেলার কাছে তা জানতে চেয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় পরিকাঠামো কতটা তৈরি রয়েছে, বিশেষত শিশু চিকিৎসায় ‘নিওনেটাল ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু), ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট’ (পিকু) এবং এসএনসিইউ-এ কত শয্যা বাড়ানো হয়েছে, সেই সব বিষয় ছাড়াও অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি-সহ, বিভিন্ন পরিকাঠামোর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।