West Bengal Panchayat Election 2023

মনোনয়নের জন্য ৫ দিন যথেষ্ট নয়: হাই কোর্ট! কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যকেই

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রায় একই দাবিতে বিজেপি এবং কংগ্রেস কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে তার শুনানি চলছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ১৪:২৯
Share:

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহকে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নির্দেশ দিল হাই কোর্ট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। বিজেপি এবং কংগ্রেসের পাঁচ দফা আবেদনের শুনানিতে শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তবে সেই সঙ্গেই প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘আদালত প্রাথমিক ভাবে মনে করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য যে সময় দিয়েছে তা উপযুক্ত নয়। ওই সময়সীমা আরও বাড়ানো উচিত।’’

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটে প্রায় ৭৫ হাজার আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য ৫ দিন সময় কম বলে মনে করছে কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মনোনয়ন থেকে ভোটগ্রহণ পুরো সময়টি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে। মনোনয়নে সময় খুবই কম দেওয়া হয়েছে। ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। মহকুমাশাসক, জেলাশাসক বা কমিশনের অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখতে হবে।’’ আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

হাই কোর্টের নির্দেশ, এই বিষয়গুলি নিয়ে কমিশনকে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবে রাজ্য। ভোটগ্রহণ থেকে গণনা, গোটা প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিতে করা ভাল। চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ারদের পঞ্চায়েত ভোটে ব্যবহার করা নিয়ে আদালতের কোনও নির্দেশ থাকলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তা মেনে চলতে হবে বলেও শুক্রবার জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, ভোট সংক্রান্ত কোন কোন কাজে সিভিকদের ব্যবহার করা যাবে, তা নিয়ে এর আগে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একটি নির্দেশ ছিল। কমিশনকে ওই নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করতে বলেছে কলকাতা হাই কোর্ট।

Advertisement

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রায় একই দাবিতে বিজেপি এবং কংগ্রেস কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে। শুক্রবার বিজেপির আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিজেপি এবং কংগ্রেসের তরফে জনস্বার্থ মামলা করতে চেয়ে আবেদন জানানো হয়। সেই অনুমতি দেয় আদালত। দ্রুত শুনানির আর্জিও মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতি। শুক্রবারেই দুপুরে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়।

মূলত ৫টি দাবি নিয়ে আবেদনকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন—

এক, মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কম সময় দেওয়া হয়েছে। মোট নির্বাচনী ক্ষেত্র দেখলে প্রতি কেন্দ্র পিছু মনোনয়নের জন্য ৩৯ সেকেন্ড সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রশ্ন, এই সময়ের মধ্যে এত প্রার্থী কী ভাবে মনোনয়ন জমা দেবেন?

দুই, নির্বাচন ঘোষণার আগে কোনও সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, যা এত দিন হয়ে এসেছে। বৈঠক না ডেকেই তড়িঘড়ি নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে।

তিন, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের উদাহরণ দিয়ে আবেদনকারীদের যুক্তি, সে সময় প্রচুর আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি প্রার্থীরা। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

চার, সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। সব বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্যও আবেদনকারীরা আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, নির্বিঘ্নে এক দফায় গোটা রাজ্যে ভোট করাতে হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনার রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা রেখেছেন। অথচ অতীতে এ রাজ্যে সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট করাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।

পাঁচ, জেলার নির্বাচন পরিচালনার কেন্দ্রীয় অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস ছাড়াও অন্যত্র এই ব্যবস্থা করা হোক। মনোনয়ন জমা দিতে সমস্যা হলে জেলা বিচারক বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement