West Bengal Flood Situation

এখনও জলমগ্ন বহু গ্রাম, তবে ডিভিসি বড় পরিমাণে জল না ছাড়ায় নতুন করে অবনতি হয়নি পরিস্থিতির

নতুন নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের জেরে হওয়া বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় সেই আশঙ্কা অনেকটাই কেটেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

আমতা, ঘাটাল ও খানাকুল শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:০০
Share:

বন্যায় ডুবেছে ঘর। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এক বৃদ্ধা। ছবি: পিটিআই।

দু’সপ্তাহ আগের একটি নিম্নচাপের বৃষ্টি এবং ডিভিসির ছাড়া জল দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাকে বানভাসি করেছিল। তাই নতুন নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের জেরে হওয়া বৃষ্টি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় সেই আশঙ্কা অনেকটাই কেটেছে। গত তিন দিনের মাঝারি বৃষ্টির পরেও হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের নিচু এলাকাগুলি থেকে জল নামছে।

Advertisement

নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। তবে ঘাটাল মহকুমার ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনা, মেদিনীপুর সদর মহকুমার কেশপুর, খড়্গপুর মহকুমার ডেবরা অঞ্চলের বহু গ্রাম এখনও জলমগ্ন। ঘাটাল মহকুমায় এখনও ১১৪টি ত্রাণ শিবির চালাচ্ছে মহকুমা প্রশাসন। বিলি করা হচ্ছে ত্রাণ, শুকনো খাদ্যসামগ্রী, এমনকি রান্না করা খাবারও। ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “বৃষ্টির কারণে নদীতে জলস্তর কিছুটা বেড়েছে, তবে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। এখনও ত্রাণ শিবির চালু রাখা হয়েছে।” বন্যার কারণে জলের তলায় চলে গিয়েছে চাষের জমি। জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ২ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা।

যে সব এলাকায় জল নেমে গিয়েছে, সেখানে জলবাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে ব্লিচিং, ফিনাইল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আশাকর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নৌকা, ডিঙি বা বোটে চেপে কেউ অসুস্থ কি না, সে খবর নিচ্ছেন। প্রয়োজনে বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে ওষুধও দিয়ে আসছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, “বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের জন্য ত্রাণ শিবির চলছে। ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। চাষের জমির পাশাপাশি ফুল চাষের ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য রিপোর্ট তলব করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে। রিপোর্ট পেলেই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।”

Advertisement

গ্রামীণ হাওড়ার আমতা এবং উদনারায়ণপুরের বন্যা পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদীবাঁধ টপকে নতুন করে জল গ্রামে ঢোকেনি। তবে এখনও বহু এলাকা জলমগ্ন রয়েছে। ত্রাণশিবির গুলি খোলা রয়েছে। নিচু এলাকাগুলি থেকে জল নামায় শিবিরগুলি থেকে কিছু মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। পুজোর মুখে সব হারিয়ে কার্যত পথে বসেছেন বহু মানুষ। জল দাঁড়িয়ে থাকায় এলাকায় বহু বাড়িঘর রাস্তাঘাট ভেঙেছে। ক্ষতি হয়েছে চাষের জমিরও।

পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়ার মতো বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে হুগলিতেও। জেলার খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া এবং তারকেশ্বরের জলমগ্ন গ্রামগুলি থেকে জল নামছে। তবে জল নেমে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পুজো গড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টিপাত কমায় জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়েছে ডিভিসিও। বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাইথন জলাধার থেকে ৬ হাজার এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৭ হাজার কিউসেক হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এই জল পৌঁছবে দুর্গাপুর জলাধারে। তবে জলের পরিমাণ তুলনায় কম হওয়ায় তা নতুন করে জেলাগুলিকে ভাসাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মামলা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, আগামী ৩ অক্টোবর তা রাজ্যকে জানাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement