মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পারিবারিক অশান্তির জেরে এমন ঘটনা ঘটছে। যদিও তাতে রাজনৈতিক কারণ যোগ করে দেওয়া হয়। ঝালদার ক্ষেত্রেও যে তা ঘটে থাকতে পারে, তেমনই তিনি শুনেছেন বলে দাবি করেছেন মমতা।
—ফাইল চিত্র।
ঝালদা কাণ্ডে পারিবারিক অশান্তির ইঙ্গিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিধানসভায় স্বরাষ্ট্র বাজেট নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় পানিহাটিতেও কাউন্সিলর খুনের নেপথ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টার ইঙ্গিত পাচ্ছেন বলে জানালেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পারিবারিক অশান্তির জেরে এমন ঘটনা ঘটছে। যদিও তাতে রাজনৈতিক কারণ যোগ করে দেওয়া হয়। ঝালদার ক্ষেত্রেও যে তা ঘটে থাকতে পারে, তেমনই তিনি শুনেছেন বলে দাবি করেছেন মমতা। যদিও তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। পানিহাটি প্রসঙ্গে তাঁর অনুমান, ২০২৪ সালের ভোটের আগে অশান্তি তৈরির একটা চেষ্টা চলছে। এ সবের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। মূল অভিযুক্তকে যে ভাবে এলাকাবাসী ধরতে সহযোগিতা করেছেন, তাকে সাধুবাদ দিয়েছেন মমতা।
এ দিন আনিস-কাণ্ডের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বিচারাধীন বলে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর বক্তব্য, রিপোর্ট জমা পড়েছে। তদন্ত হচ্ছে। দোষীদের কেউ ছাড় পাবে না।
তবে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে নারাজ। তাঁরা বরং পুলিশের ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। বিধানসভার অন্দরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশকে এ ভাবে ব্যবহার আগে কখনও হয়নি। অন্য রাজ্যেও হয়নি। পুলিশের উপর আস্থা-বিশ্বাস উঠে গিয়েছে।”
অন্যান্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির সভাপতির গাড়ির উপর হামলার ঘটনায় রাজ্য ব্যবস্থা নিয়েছিল। অথচ উত্তরপ্রদেশে তাঁকে ঘিরে যে ভাবে অশান্তি করা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “বিজেপির গুন্ডাদের ঠেকাতে ব্যারাকপুরে আটটা থানা করতে হয়েছে। নোয়াপাড়া, পানিহাটিতে খুন করেছে কে? ২০২৪ ভোটের আগে চিমটি দিতে চাইছে। জীবন দিয়ে রক্ষা করব, বাংলাকে অশান্ত করতে দেব না। তৃণমূলেরও কেউ দোষ করলে তাদের ধরা হয়। আমরা কেউ চুড়ি পরে বসে থাকি না।”
ঝালদার নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর পরিবার ‘অডিয়ো ক্লিপ’ (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) প্রকাশ করে ঝালদা থানার আইসি-র বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে। সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করছে বিরোধীরাও। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, “আজ সাংঘাতিক ঘটনা ঘটছে। ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছি, তা রেকর্ড করে ভাইরাল করা হচ্ছে। তার মানে কারও সঙ্গে কথা বলব না? পুলিশের ক্ষেত্রে যেমন হচ্ছে, সাংবাদিকের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তা হলে তো কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। সব বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি।” সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ফোন রেকর্ড করে তা ভাইরাল করাও ‘অপরাধ’। মমতার কথায়, “বিশ্বাস করে কারও সঙ্গে কথা বললে সে রেকর্ডটা বের করে দেয়। আমাকে হাজার জন ফোন করে, বলব ধরব না? এটা অপরাধ। মনে রাখবেন, সরকারের একটা আইন আছে।” পুলিশ বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের প্রায় প্রতিটি অভিযোগেরই জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত পুরভোটে পুলিশের বিরুদ্ধে ছাপ্পার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, “উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশে ৮০-৯০% আসন জিতেছে। তবে কি সেখানকার পুলিশ জিতিয়েছে?”
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কোভিড মোকাবিলা— প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরে মমতার বক্তব্য, এক-দু’জন ভুল করলে গোটা বাহিনীকে খারাপ বলা যায় না। তাঁর কথায়, “এখানকার পুলিশ কালো, দিল্লির পুলিশ ভাল? স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে এখানকার পুলিশ তুলনীয়। কড়া এবং মানবিক মুখ নিয়ে কাজ করবে পুলিশ। ভুল হলে শুধরে নেবে। রাজনৈতিক রং দেখে কাজ করবে না।” অন্য দিকে এ দিন বিধানসভায় স্বরাষ্ট্র বাজেট খাতে প্রায় ১২ হাজার ৫৭৪ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।