তৈরি হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের লঞ্চিং প্যাড। —নিজস্ব চিত্র।
একদিকে তাজপুরে সমুদ্র বন্দর, অন্য দিকে জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে দুই প্রকল্প ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।
জুনপুটে যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যেই তাজপুরের প্রস্তাবিত বন্দর এলাকা। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শুরু হয়ে গেলে সেখানে বন্দর স্বাভাবিক ছন্দে চলতে পারবে কি না, বন্দরকে ঘিরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রই বা কী ভাবে তৈরি হবে, তা নিয়ে সংশয় ঘনিয়েছে। প্রশ্নের মুখে উপকূলের জীব বৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎও।
এর মধ্যে জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ‘ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটি’ নামে বিজ্ঞান কর্মীদের সংগঠন। শনিবার তারা কাঁথির মহকুমাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেয়। তাদের দাবি, ২০১২ সাল থেকেই এই পরিকল্পনা হচ্ছে। সংগঠনের জেলা নেত্রী রুম্পা সাহু বলছেন, ‘‘জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে প্রতিরক্ষার খাতিরে গোটা এলাকা সেনাবাহিনীর দখলে চলে যাবে। তখন অনায়াসে জমি অধিগ্রহণ করে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিও অস্বাভাবিক নয়। এর পাশে সমুদ্র বন্দর হলেও স্বাভাবিক ভাবে তাকে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তেরও মত, ‘‘একই উপকূলে এত কম দূরত্বে এ ধরনের দু’টি প্রকল্প গড়ে তোলা আদৌ উচিত নয়।’’
প্রশ্ন উঠে গিয়েছে উপকূলের জীববৈচিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও। জুনপুটে যে এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ে উঠছে, তার ধারেই বিশাল ম্যানগ্রোভ অরণ্য। পাশে বালিয়াড়ি। এই এলাকাটি তাই ‘অতিস্পর্শকাতর বাস্তুতন্ত্র’ বলে চিহ্নিত। জুনপুট-সহ সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার এলাকা ‘বায়োডাইভার্সিটি হেরিটেজ এরিয়া’ হিসেবেও ঘোষিত। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলছেন, ‘‘সব কিছু ভুলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ দেখতে গিয়ে উপকূলের বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা বিপদের মুখে পড়তে চলেছে।’’
২০১২ সালে কাঁথিতে নাগরিক কনভেনশনে এসেছিলেন ভাটনগর পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানী সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও তখন বলেছিলেন, জুনপুটে প্রস্তাবিত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ে উঠলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা এবং উপকূলের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ডিআরডিও তৈরি করছে। তারা সব দিক খতিয়ে দেখেই নিশ্চিতভাবে কাজ করছে। তবে সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা সম্ভব কি না, বলা মুশকিল।’’ যদিও এই দুই প্রকল্পে কোনও বিরোধ নেই বলেই মত দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাসের।
কন্টাই সায়েন্স অ্যাকাডেমির কোর কমিটির সদস্য তথা হাই স্কুলের পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক শোভন মাইতি জানাচ্ছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের প্রকৃতির উপর উৎক্ষেপণ-পরবর্তী প্রভাব নির্ভর করে। সাধারণ মানের ক্ষেপণাস্ত্র হলে উৎক্ষেপণের পরে আয়োনোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা রেখা সৃষ্টি হয়। তবে তা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মুছে যায়। রেডিয়োঅ্যাকটিভ ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে ওড়িশার চাঁদিপুরে এখনও সে রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর শ্রীহরিকোটায় শুধুমাত্র নাসার গবেষণার কাজে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়। সেখানেও বিপজ্জনক কিছু ঘটে না।