সমীর জানিয়েছেন, পঞ্জাবের বাসিন্দা এক ব্যক্তির সহায়তায় হাজার ডলার দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে কিছুটা পথ তারা এগিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর সেই গাড়ি যেতে পারেনি। কিন্তু পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য ছ’দিন ধরে তাঁদের একটানা হেঁটে যেতে হয়। অবশেষে তাঁরা সীমান্ত পেরোতে পারেন। পোল্যান্ড থেকে বিমানে ফেরেন দিল্লি।
নদিয়ার বাড়িতে বসে শোনাচ্ছেন ইউক্রেনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। নিজস্ব চিত্র।
টানা ছ’দিন পায়ে হেঁটে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে পৌঁছনোর পর শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরলেন নদীয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা তিন যুবক । করোনা পরিস্থিতিতে কাজের সন্ধানে ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পড়ে প্রাণসংশয় হয়েছিল তাঁদের। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেন থেকে আলিপুরদুয়ারের বাড়িতে ফিরেছেন এক ডাক্তারি পড়ুয়াও।
এক সময় তাঁতকলের শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন শান্তিপুরের সমীর বিশ্বাস ,অমিত বিশ্বাস, সুমন অধিকারী। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারান তাঁরা। টান পড়ে রোজগারে। তখনই কাজের সন্ধানে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনজন। কাজের উদ্দেশ্যে মাস ছ’য়েক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তারা। দিল্লিতে মাস দুয়েক কাটানোর পর বিদেশে মজুর পাঠানোর দালালচক্রের পাল্লায় পড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ইউক্রেনে। তিন মাস সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বাদ সাধে যুদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি ভারত সরকারও তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরে আসার নির্দেশিকা জারি করে। প্রাণ বাঁচিয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন ওই তিন যুবক।
সমীর জানিয়েছেন, পঞ্জাবের বাসিন্দা এক ব্যক্তির সহায়তায় হাজার ডলার দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে কিছুটা পথ তারা এগিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর সেই গাড়ি যেতে পারেনি। কিন্তু পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য ছ’দিন ধরে তাঁদের একটানা হেঁটে যেতে হয়। অবশেষে তাঁরা সীমান্ত পেরোতে পারেন। পোল্যান্ড থেকে বিমানে ফেরেন দিল্লি। সেখানে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। দিল্লি থেকে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। সমীর বলেন, ‘‘আর আমরা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে চাই না। এখনও সেই আতঙ্কের দিনগুলির কথা পুরোপুরি মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।’’
আলিপুরদুয়ার জংশনের লেনিন কলোনির বাসিন্দা গৌরব কুমার ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে আটকে গিয়েছিলেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহায়তায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের পাঠানো গাড়িতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। ইউক্রেনের টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌরব বলেন, ‘‘যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি সীমান্তে এসেছিলাম। প্রচন্ড শীতের মধ্যে ওই কদিন বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে রোমানিয়ার বিমানবন্দরে ছিলাম।’’ গৌরবের অভিযোগ, সীমান্ত পোরনোর আগে ১৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে তাঁদের। ইউক্রেন পুলিশ একাধিক বার ভারতীয় ছাত্রদের হেনস্থা করেছে।