Uttarkashi Tunnel Rescue Operation

মাকে সান্ত্বনা সৌভিকের, জয়দেবের বাড়িতে প্রিয় খাবার

পড়শির মোটরবাইকে চড়ে রওনা হলেন নিজ নিজ বাড়ির দিকে। তাঁদের দেখতে রাস্তাতেও বিক্ষিপ্ত জমায়েত দেখা গেল। বয়স্করা কেউ কেউ পথ আগলে বাইকে থামিয়ে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, চুম্বন করছেন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

পুরশুড়া শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৪
Share:

সৌরভ পাখিরা (বাঁ দিকে) ও জয়দেব পারমানবিক ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি যাওয়ার পথে। রবিবার সকালে পুরশুড়ার তকিপুর স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল ৯টা, রবিবার। পুরশুড়ার তকিপুর রেল স্টেশনে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার মানুষ। প্রতিবেশী এবং বন্ধুরা ফুলের মালা নিয়ে তৈরি তাঁদের বরণ করে নিতে। ৯টা ২২ মিনিটে হাওড়া থেকে গোঘাটগামী ট্রেন থেকে নামলেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হওয়া পুরশুড়ার দু’ই শ্রমিক— হরিণাখালির বছর চব্বিশের সৌভিক পাখিরা এবং নিমডাঙির বছর উনিশের জয়দেব পরামানিক। তাঁদের দেখে উচ্ছাসে ফেটে পড়লেন সকলে। লম্বা ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সৌভিক এবং জয়দেব।

Advertisement

পড়শির মোটরবাইকে চড়ে রওনা হলেন নিজ নিজ বাড়ির দিকে। তাঁদের দেখতে রাস্তাতেও বিক্ষিপ্ত জমায়েত দেখা গেল। বয়স্করা কেউ কেউ পথ আগলে বাইকে থামিয়ে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, চুম্বন করছেন। মুঠো ভর্তি লজেন্স নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রৌঢ় বললেন, “ছেলেগুলোকে আদৌ সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা যাবে কি না তা নিয়ে বড় উৎকণ্ঠা ছিল আমাদের। ওরা ফিরেছে, শান্তি। ওদের দেব এই লজেন্সগুলো।”

স্টেশন থেকে তুলনামূলক ভাবে কাছে সৌভিকের বাড়ি। তাঁর মা ও আত্মীয়েরা উঠোনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ছেলেকে দেখেই বুকে জড়িয়েই চোখের জলে ভাসালেন মা লক্ষ্মী। ছেলে বললেন, “শুধু শুধু কাঁদছো কেন? এই তো দেখ ভাল আছি। বাবা কই?” বাবা অসিত তখন এ দিনের রান্নার হাট-বাজার সেরে আরও মিষ্টি কিনতে গিয়েছেন।

Advertisement

বাড়ির মন্দির চত্বরে ছেলেকে প্রণাম করিয়ে ৫ কেজি বাতাসা ছড়ানো হল। সৌভিকের জন্য এ দিন রান্না হয়েছে তাঁর পছন্দের রুই এবং ইলিশের সরষে ঝাল। লাউ-পালং শাকের তরকারি, মুসুর ডাল, আমসত্ত্ব দিয়ে টোম্যাটোর চাটনি। শীতের পোষাক খুলে হাসি মুখে সৌভিক বলেন, “সবার সঙ্গে দেখা হবে এ বার। দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত আমাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। সুড়ঙ্গে আটকে থাকার অভিজ্ঞতাটাও হয়ে গেল।”

জয়দেবের গ্রামে আবার বাজিও ফেটেছে। গ্রামের পঞ্চানন মন্দির, শীতলা মন্দির, পীরের থান ঘুরে তিনি বাড়ি ঢুকতে পেরেছেন দুপুর ১২টা নাগাদ। সাড়ে ১২টাতেও জয়দেবদের রান্না চাপেনি। বাবা তাপস জয়দেবের প্রিয় খাবার খাসির মাংস রান্নার জোগাড় করছেন। মাংসের সঙ্গে হয়েছে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, শাকের তরকারি আর পায়েস। খেতে খেতে বিকেল ৩টে। জয়দেবের মা বলেন, “ছেলে মাস তিনেক বাড়িতে থাকবে বলেছে। এখানেই একটা সরকারি কাজের ব্যবস্থা হলে ভাল হত।”

জয়দেব জানালেন, বাড়ি ফিরে খুব ভাল লাগছে। সুড়ঙ্গে আটকে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে জয়দেব বলেন, “দিন দুই সামান্য ঘাবড়ে গেলেও ভিতরে মজা করেই কেটেছে আমাদের। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলা, খাবার, খেলার সরঞ্জাম ইত্যাদি যা চেয়েছি তাই ব্যবস্থা করেছে কোম্পানি।”

তবে ছুটি কাটিয়ে ফের তাঁরা নিজেদের সংস্থাতেই ফিরতে চান বলে জানিয়েছেন সৌভিক এবং জয়দেব। তাঁরা জানান, সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধারের দিনই তাঁরা ৪১ জন উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে ১ লক্ষ টাকার চেক পেয়েছেন। গত ২৯ তারিখে নিজেদের সংস্থার তরফে ২ লক্ষ টাকার চেক পেয়েছেন। এছাড়া ২ মাসের অগ্রিম বোনাস এবং তিন জোড়া করে জুতো ও শীতের নানা পোশাক। এ বাদেও কাজে যোগ না দিলেও আগামী ৬ মাস পর্যন্ত তাঁদের বেতন অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে বলে সংস্থার কর্মকর্তারা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement