সারি: দাঁড়িয়ে কয়েছে পাথর বোঝাই ট্রাক। নিজস্ব চিত্র
বন্দর খোলা। শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, সরকারিভাবে কোনও বাধা নেই। তবু দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে না ভারতীয় পাথর। শুধু ভুটানের পাথর বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে যাচ্ছে। ফলে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতি হচ্ছে ভারতের। এ দেশের ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা বাংলাদেশে পাথর পাঠাতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, সীমান্তের ব্যবসা কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে ভুটান ও ভারতের দু’টি সিন্ডিকেট। ভারতীয় পাথরের দাম কত হবে, কোন রফতানিকারীর ক’টা ট্রাক ওপারে যাবে, পাথর কার কাছ থেকে কিনতে হবে— সব ঠিক করছে ওই সিন্ডিকেট।
সমস্যা মিটিয়ে স্থলবন্দর স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক স্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছেন মন্ত্রী গৌতম দেবও। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, ‘‘ফুলবাড়িতে কিছু দিন থেকেই সমস্যা চলছে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ-সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে অভিযোগ আছে। আমরা পদক্ষেপ করেছি।’’ পাথর রফতানি বন্ধ থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা যে আসছে না, সে কথা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। সমস্যা মিটিয়ে যাতে বন্দর স্বাভাবিক করা যায়, আমরা সে চেষ্টা করছি।’’
কী ভাবে ব্যবসা হয়? দু’দেশের ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের কোনও আমদানিকারী ভারত থেকে পাথর কিনতে চাইলে তাঁকে ভারতীয় ব্যবসায়ীকে অগ্রিম অর্থ দিতে হয়। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ওই লেনদেন হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী কত পরিমাণ পাথর কিনবেন, সেই হিসেবে অর্থ ভারতীয় ব্যবসায়ীকে পাঠাতে হয়। পাথর বাংলাদেশে পৌঁছে গেলেই ব্যাঙ্ক থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যায়। সিন্ডিকেট কী করে ? অভিযোগ, রফতানিকারী ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ওই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে তাদেরই ঠিক করা দামে পাথর কিনতে বাধ্য হন। পাথর পরিবহণের জন্য ট্রাক সরবরাহ করে ওই সিন্ডিকেটই। তার বাইরে কোনও ট্রাকই বাংলাদেশে ঢুকতে পারে না—অভিযোগ রফতানিকারীদের একাংশের। এক রফতানিকারী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের একাধিক ব্যবসায়ী পাথর সরবরাহের জন্য ব্যাঙ্কে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পাথর পাঠাতে পারছি না। আমি নিজের উদ্যোগে ট্রাক ভাড়া করে পাথর পাঠাতে চাইলেও ওরা (সিন্ডিকেট) বাধা দিচ্ছে।’’
রফতানিকারীদের একাংশের দাবি, লাভজনক হওয়ায় ভুটান থেকে বেশি পাথর নেওয়া শুরু হয়। তাতে ভারতীয় পাথরের চাহিদা কমে। ভুটানের সিন্ডিকেটের রমরমা বাড়ে। দুই সিন্ডিকেটের মধ্যে গোলমালে ভারতের সব ট্রাক আটকে দেয় ভারতের এক সিন্ডিকেটের কারবারিরা।
ফুলবাড়ি ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন থেকেই একটি দালালচক্র সীমান্তের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের হাত থেকে বন্দর বাঁচাতেই আমরা আন্দোলন চালাচ্ছি। বৃহস্পতিবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনও ভারতীয় ব্যবসায়ী বাংলাদেশে পাথর পাঠাতে চাইলে পাঠাতে পারবে।’’ নর্থবেঙ্গল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের জন্যই ফুলবাড়ি বন্দরে বাণিজ্য লাটে উঠছে।’’