এসটিএফের হাতে ধৃত দুই কীর্তিমান। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের দুই জায়গায় বসে ব্যক্তিগত টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খুলে কোটি কোটি টাকার টেলিকম রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছিল কেরলের দুই যুবক। বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগে আসানসোল এবং বাঁকুড়া থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।
আসানসোল উত্তর থানার সুগম পার্ক, আড্ডা কলোনি এবং ওয়েবেল আইটি পার্কে বৃহস্পতিবার হানা দেয় এসটিএফ। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীর সরকারের টেলিফোন মন্ত্রকের আধিকারিকরাও। আড্ডা কলোনি থেকে এ কে জিসাদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, ব্যক্তিগত টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খুলে জিসাদ কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছিলেন। তদন্তকারীদের মতে, তার জেরে প্রতি মাসে আনুমানিক ১২ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছিল। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাঁরা যখন জিসাদের ঘরে হানা দেন তখন তিনি নানা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম চালানোয় ব্যস্ত ছিলেন। অভিযুক্তকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
একই ঘটনা ঘটেছে বাঁকুড়ার ব়ডজোড়ার আইটি পার্কেও। সেখানকার আইটি হাব থেকে মহম্মদ রিয়াস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই একই অভিযোগে। ধৃতকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা আদালত।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলের ক্ষেত্রে সাধারণত মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয় যিনি ফোন করছেন তাঁকে। কিন্তু সেই কলকে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্থানীয় কলে পরিণত করে ফেললে কল চার্জ কমে যায় অনেকটাই। পাশাপাশি, যিনি ফোন করছেন তাঁর পরিচয় এবং ফোন নম্বরও গোপন থাকে। নির্দিষ্ট এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল’ যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। জানা গিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতারণা চক্র ‘অটো ট্রাঙ্কেটেড ডিভাইস’ নামের এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে এই ধরনের ফোন কল করা হয়। সম্প্রতি এসটিএফ এই ধরনের ফোন কলের তদন্তে নেমে জানতে পারে এই তথ্য।
তদন্তকারীদের ধারণা, মূলত আন্তর্জাতিক কলকে স্থানীয় কলে রূপান্তরিত করে টেলিকম রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এবং তার বিনিময়ে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে অর্থ উপার্জনই উদ্দেশ্য ছিল ধৃত মহম্মদ ইলিয়াসের । কিন্তু তার আড়ালে সে অন্য কোনও ফাঁদ পেতেছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ আইন এবং ইন্ডিয়ান ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। দু’জন আলাদা আলাদা জায়গা থেকে ধরা পড়লেও তাদের মধ্যে কোনও যোগসাজশ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।