Calcutta High Court

SSC: ২৫ নয় ৫০০ নিয়োগে দুর্নীতি? চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ মামলায় এ বার আঙুল পর্ষদের দিকে

মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, অস্বচ্ছ ভাবে নিয়োগের সংখ্যা প্রায় ৫০০-র বেশি। মামলার পরবর্তী শুনানি সোমবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১৫:২৩
Share:

ফাইল ছবি।

স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি বা গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় নতুন মোড়। এর আগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। এ বার আঙুল উঠল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দিকেও। দুর্নীতি করে ২৫ নয় প্রায় ৫০০ জনের বেশি নিয়োগ করা হয়েছে আদালতে দাবি করলেন মামলাকারীরা। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা-সহ তালিকা আদালতে জমা দিতে।

Advertisement

২০১৯ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রচুর নিয়োগ হয়েছে বলে মামলা দায়ের হয় আদালতে। প্রাথমিক ভাবে ওই অনিয়মের অভিযোগ কমিশনের বিরুদ্ধে উঠেছিল। কিন্তু বুধবার কমিশন আদালতে জানায়, ওই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও সুপারিশ তারা করেনি। এমনকি বৃহস্পতিবার এ নিয়ে তারা একটি হলফনামাও জমা দেয়। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এসএসসি যদি সুপারিশ না করে, তবে ওই নিয়োগ হল কী ভাবে? আর এতেই জড়িয়ে পড়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নাম। তবে বৃহস্পতিবার আদালতে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন পর্ষদের আইনজীবী। তিনি জানান, পর্ষদ নিজে থেকে কোনও নিয়োগ করেনি। কমিশনের সুপারিশ মেনেই হয়েছে যাবতীয় নিয়োগ। ফলে শুনানি কক্ষেই শুরু হয়ে যায় কমিশন-পর্ষদ একে অপরের দোষারোপের পালা।

এই দ্বন্দ্ব শুনে হতবাক হন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সোমবারের মধ্যে পর্ষদকে নিজের দাবি সংক্রান্ত হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দেন। পর্ষদের আইনজীবী অতিরিক্ত এক দিন সময় চান। তিনি বলেন, ‘‘তিন দিন ছুটি রয়েছে। তাই আর একটি দিন সময় দেওয়া হোক।’’ বিচারপতির কড়া মন্তব্য, ‘‘সমাজ যখন দুর্নীতিতে ভরে যায়, তখন অতিরিক্ত সময় দেওয়া যায় না।’’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘‘কেউ অন্যায় করেনি বলছেন। সবাই নিজেকে সৎ বলে। অথচ দেখা যাচ্ছে দুর্নীতিতে দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’’

Advertisement

এই মামলায় চমকপ্রদ বিষয় হল অস্বচ্ছ ভাবে ২৫ জনের নিয়োগ নিয়ে যে মামলা হয়েছিল, এখন দেখা যাচ্ছে আসল সংখ্যা ৫০০ জনেরও বেশি। মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, অস্বচ্ছ ভাবে নিয়োগের সংখ্যা প্রায় ৫০০-র বেশি। এই শুনে বিচারপতি মামলাকারীদের নির্দেশ দেন, তথ্য প্রমাণ-সহ ওই সব তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হোক। সোমবার ফের এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, স্কুল সার্ভিস কমিশনের জমা দেওয়া হলফনামায় সন্তুষ্ট নন। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের যে সুপারিশ ছিল না, তা হলফনামা নিয়ে আদালতকে জানাতে বুধবার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো বৃহস্পতিবার হলফনামা জমা দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন। কমিশনের জমা দেওয়া হলফনামা সন্তুষ্ট করতে পারেনি বিচারপতিকে। ক্ষুব্ধ বিচারপতি তা ফিরিয়ে দেন এবং আধ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় হলফনামা জমার দেওয়ার নির্দেশ দেন।

পাশাপাশি আরও ৫০০ জনকে নিয়ম না মেনে নিয়োগ করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছেন মামলাকারী। ওই ৫০০ জনের নাম, ঠিকানার তালিকা মামলাকারীকে সোমবারের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই মামলার পরবর্তী শুনানিও সোমবার সাড়ে ৩টের সময় হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার হাই কোর্টে কমিশন জানিয়েছিল, নিয়ম না মেনে যে নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে তাতে তাদের কোনও সুপারিশ নেই। অর্থাৎ ওই নিয়োগ কমিশন করেনি বলে তাদের তরফে দাবি করা হয়। আর এই তথ্যই লিখিত আকারে জানতে চেয়েছে আদলত। কিন্তু বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, তারা কমিশনের সুপারিশ মেনেই নিয়োগ করেছিল। এর জেরে আর বিপাকে পড়তে পারে কমিশন।

স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে বেনজির অনিয়মে ‘বিস্মিত’ কলকাতা হাই কোর্ট। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে আদলতকে। যে ২৫ জনের নিয়োগ নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ, তাঁদের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালত পুনরায় নির্দেশ না দেওয়া অবধি বন্ধ থাকবে বেতন। হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিয়ে তদন্তের বিষয়টি নিয়েও বুধবার শুনানির সময় আলোচনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে প্রায় ১৩ হাজার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে রাজ্য। সেই মতো পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ নেয় এসএসসি। তার পর সেখান থেকে তারা একটি প্যানেল তৈরি করে। ২০১৯ সালে ওই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়। অভিযোগ, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রচুর নিয়োগ করেছে কমিশন। আবার কমিশনের আঞ্চলিক অফিসের ক্ষেত্রেই এমন অভিযোগ ওঠেছে। এখন তার মধ্যে ২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশ তুলে ধরে মামলা করা হয় হাই কোর্টে। মঙ্গলবার মামলাটি ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। ওই নিয়োগের সুপারিশে গন্ডগোল রয়েছে প্রাথমিক ভাবে এমনটা মনে করছিলেন বিচারপতি। কমিশনের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে। আঞ্চলিক অফিসের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই কমিশনের তা বোঝাই যাচ্ছে। তথ্যও সে কথা বলছে। কীভাবে এমন কমিশন চলতে পারে!’’ বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই না আরও একটা ব্যপম-কাণ্ড হোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement