আব্দুল বারিক বিশ্বাস। ফাইল চিত্র।
এত দিন কয়লা পাচার মামলায় তাঁরা সিআইডি হেফাজতে ছিলেন। গরু পাচারের তদন্তে মঙ্গলবার সিআইডি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ী সঞ্জয় মল্লিককে। একই সঙ্গে অন্য ব্যবসায়ী আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে হেফাজতে নিয়েছে বসিরহাট পুলিশ। রাজ্য পুলিশের এই তৎপরতায় প্রশ্ন উঠছে, নিজেদের হেফাজতে থাকা দুই ব্যবসায়ীকেই কি তদন্তে তরুপের তাস করতে চলেছে তারা?
জোরদার হয়ে উঠছে আরও একটি প্রশ্ন। সেটি হল, মল্লিক ও বারিক দুই ব্যবসায়ীই তো কয়লা পাচার মামলায় এত দিন সিআইডি হেফাজতে ছিলেন। তা হলে গরু পাচারের পৃথক মামলায় সিআইডি ও বসিরহাট পুলিশ কেন ফের তাঁদের হেফাজতে নিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই দু’জনের বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগ পুরনো। ওই দু’জনের মধ্যে বারিকের সঙ্গে পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের একাংশ এবং গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক রয়েছে। কার্যত সেতুবন্ধনের কাজটা করতেন বারিকই। এমনকি গরু পাচারের মামলায় সিবিআইয়ের হাতে ধৃত কয়েক জনকে জেরাতেও বারিকের ওই মসৃণ সম্পর্কের কথা উঠে এসেছিল। সঞ্জয় আবার বারিকের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। বারিকের কাজকর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে সঞ্জয়ের। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই দু’জনকে জেরা করলেই পাচারের গরু জোগান দেওয়ার উৎস জানা যাবে। জানা যাবে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার কিংবা হরিয়ানার ঠিক কোন কোন অঞ্চল থেকে লরি ভর্তি হয়ে গরু আসে, কারা সেখানকার গরু ব্যবসায়ী? সীমান্তে ‘কঠোর’ নজরদারি থাকা সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে নদী পেরিয়ে পালে পালে গরু বাংলাদেশ পাচার হয়ে যায় কী ভাবে, তারও সূত্র মিলবে।
এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘কী ভাবে ভিন্ রাজ্য থেকে গরু এখানে আসছে, হাতবদল হয়ে তারা বাংলাদেশ চলে যাচ্ছে এবং কাদের মদতে সেই প্রাণী পাচারের কারবার চলে, তা নিশ্চয়ই ওই দুই ব্যবসায়ীর জানা আছে। কারণ, তাঁরা যে গরু পাচার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তার নানান সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাই এই তদন্তে তাঁরাই এখন আমাদের প্রধান তাস।’’
সিআইডি সূত্রের খবর, গরু পাচারের তদন্তে নেমে ২০১৭ সালে গরু-ভর্তি যে-সব লরি আটক করা হয়েছিল, সেগুলির মালিকদের খোঁজখবর করছেন তদন্তকারীরা। প্রয়োজনে ফের হেফাজতে নিয়ে সেই সব লরির মালিক, চালক এবং খালাসিদের জেরা করা হবে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনকে সেই সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাঁরা জামিন পান। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে গরুর হাটের বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন থানার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কত গরু বাজেয়াপ্ত হয়েছিল এবং তা কোথায় পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত পার করাতে গিয়ে কোন বছর কোথায় কত গরু আটক করা হয়েছিল এবং তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে— তা-ও বিএসএফের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।