মুকুল এখন কোন কূলে! — ফাইল চিত্র।
মুকুল এখন কোন কূলে? কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়কের দিল্লি যাত্রার পর থেকেই এমন জল্পনা তৈরি হয়। তৈরি করেন স্বয়ং মুকুল রায়। তিনি বার বার বলে চলেছেন, ‘‘আমি বিজেপিতে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ বিজেপি অবশ্য এ সবে টলছে না। মুকুল বললেও তাঁকে দলের বিধায়ক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে যে দলের আপত্তি রয়েছে, তা রাজ্য নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। তবে তৃণমূলও হাত ধুয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রমাণ, মুকুল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্ধৃতি। তিনি নবান্ন থেকেই গত বুধবার বলেন, ‘‘উনি তো বিজেপির বিধায়ক।’’
সব মিলিয়ে তৃণমূল এখন ২০২১ সালের ১১ জুনের ঘটনাকেই অস্বীকার করতে চাইছে। ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। তার এক মাস কাটতে না-কাটতেই মুকুল তৃণমূল ভবনে গিয়ে মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেন। অনেক দিন পরে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার মতো উৎসাহ দেখা গিয়েছিল তৃণমূল শিবিরে। মুকুল তখন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদে। তৃণমূল সেটাই প্রচার করেছিল যে, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিলেন। সঙ্গে প্রচার করা হয়েছিল একটি ছবি। তৃণমূল ভবনে মাস্ক খুলে বক্তব্য রাখছেন মুকুল। পাশেই বাঁ দিকে বসে অভিষেক। ডান দিকে একটু দূরে মমতা। আর মুকুলের ঠিক পিছনে বসে রয়েছে পুত্র শুভ্রাংশু রায়।
সেই দিনটার কথা মুকুল আর উল্লেখ করতে না চাইলেও, নিজেকে বিজেপি বিধায়ক বলে দাবি করলেও, তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলের কভারে রয়ে গিয়েছে ২০২১ সালের সেই ছবিটা। এমনকি, মুকুলের নামের তলায় পরিচয়েও লেখা, ‘অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস’। মুকুলের প্রোফাইল ছবিটিও সেই ‘ঘরে ফেরা’র দিনের। তৃণমূলে যোগদানের পরেই বিজেপি পরিষদীয় দল দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন করে। কিন্তু স্পিকার তাতে সাড়া না দিয়ে মুকুলকে ‘পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি’ (পিএসি)-র চেয়ারম্যান করে দেন।
২১-এর সেই দিনের কথা। মুকুল রায়ের টুইটার থেকে।
সাধারণ ভাবে যা প্রধান বিরোধী দলের কোনও বিধায়ককে করা হয়, তা নিয়েও মামলা করে বিজেপি। এর পরে মুকুল নিজের থেকে ওই পদ ছেড়ে দিলে বিজেপির টিকিটে রায়গঞ্জ থেকে জয়ী কৃষ্ণ কল্যাণীকে বসান স্পিকার। তবে তাঁর কৃষ্ণও তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও শনিবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমার রায় আগেই জানিয়ে দিয়েছি। মুকুল রায় বিজেপি বিধায়ক। মুকুল রায় বিজেপির বলেই তো তাঁকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে কোনও প্রমাণ নেই।’’ একটা প্রমাণ রয়ে গিয়েছে। সেটা মুকুলের টুইটার হ্যান্ডেলে। তবে সে দিনের অন্য ছবিরও অভাব নেই। পুরনো ছবির ফাঁদ পাতা রয়েছে গুগ্লের ভুবনে।