Mamata Banerjee

মমতা-শুভেন্দু দ্বৈরথ রাজ্য বিধানসভায়, বিজেপিকে নন্দীগ্রাম থেকে মণিপুর নিয়ে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর

বিধানসভায় বাদল অধিবেশনের চতুর্থ দিনে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই দিনেই বিরোধী দলনেতার সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ দেখা গেল। পঞ্চায়েত নিয়ে আলোচনায় উঠে এল বিধানসভা নির্বাচনের কথাও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ২২:৩১
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

বিধানসভায় বাদল অধিবেশনের চতুর্থ দিনে মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার দ্বৈরথ দেখা গেল। গত সোমবার অধিবেশন শুরু হলেও বৃহস্পতিবারই প্রথম সেখানে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির দাবি মেনেই বিধানসভায় পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতে অংশ নিয়েই শুভেন্দু তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। শুভেন্দুর পরেই বক্তৃতা করেন মমতা। সরাসরি শুভেন্দুকে আক্রমণ করার পাশাপাশি মমতা বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিশানা করেন। নাম না-নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও সমালোচনা করেন তিনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়ায় মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করার পরেই। শুভেন্দুর বক্তৃতার সময়ে তৃণমূল বিধায়কেরা চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু মমতা যখন শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে থাকেন, তখনই হইহট্টগোল শুরু হয়ে যায়। সেই সময়ে মমতা নন্দীগ্রামে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা প্রসঙ্গ তুলতেই বিজেপি বিধায়কেরাও চিৎকার করতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তৃতায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি শুভেন্দুর নেতৃত্বে ওয়াকআউটও করেন বিজেপি বিধায়কেরা। কালো কাপড় দেখিয়ে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান তাঁরা। সেই সময়ে তাঁরা ‘শেম শেম মুখ্যমন্ত্রী’ স্লোগানও তোলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর মুখে নন্দীগ্রাম

Advertisement

২০২১ সালের ২ মে-র বিতর্ক রাজ্য বিধানসভায় উঠে এল ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই। বিধানসভার বাদল অধিবেশনে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সেই প্রসঙ্গ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে দু’ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?’’ এর পরেই বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মুছে ফেলার দাবি জানায় বিজেপি। শুভেন্দুর বক্তব্য ছিল, “নন্দীগ্রামে জেতার পরে আমি বিধানসভায় নন্দীগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। বিচারাধীন বিষয় বলে আমায় বলতে দেওয়া হয়নি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী আজ বিধানসভায় এই বিষয়েই কথা বললেন।” স্পিকারের বিরুদ্ধে দু’রকম অবস্থান নেওয়ার অভিযোগও তোলেন শুভেন্দু। প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে ১৯৫৬ ভোটে শুভেন্দুর কাছে মমতা পরাজিত হয়েছিলেন। ফল ঘোষণার পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওখানে ভোট লুট হয়েছে। আদালতে যাব আমরা।’’ সেই মতো মামলা হয় এবং এখনও পর্যন্ত তার মীমাংসা হয়নি। পরে মমতা ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে এলেও এখনও নন্দীগ্রামের হার নিয়ে খোঁচা দেয় বিজেপি। মমতাকে ‘কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী’ বলেও ‘খোঁটা’ দেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবারও সে কথা বলেছেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামে জিতেছি বলেই আপনি কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী। অব্যক্ত যন্ত্রণা থেকে অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

পঞ্চায়েতে ‘ভোট লুট’ লড়াই

পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে ভোট লুট হয়েছে বলে বিজেপির তোলা অভিযোগ নিয়েও বিধানসভায় বৃহস্পতিবার মমতা ও শুভেন্দুর দ্বৈরথ দেখা যায়। শুভেন্দু তাঁর বক্তৃতায় দাবি করেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুট করেছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে বলেন, “২০১৮ সালের পঞ্চায়েতেও তৃণমূল অপকর্ম করেছিল। তারই জবাব মানুষ দিয়েছিল উনিশের লোকসভা ভোটে। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের অপকর্মের খেসারতও আগামী বছরের লোকসভায় দিতে হবে।” শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘এ বার ভোটে যা যা করেছেন আগামী বছর সুদে আসলে হিসাব দিতে হবে।’’ এর পরেই মমতা নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তা শোনার পরে বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউট করলেও বিরোধী-শূন্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপির অভিযোগের জবাব দেন মমতা। প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ভোট লুট হলে এত আসন পেল কোথা থেকে?’’ মমতা বৃহস্পতিবার পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি পেয়েছে ৯,৯৯০টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৭,৮৫৫টি পেয়েছে তৃণমূল, বিজেপি পেয়েছে ১,০৭৪টি। জেলা পরিষদে তৃণমূল ৮৭৯টি, বিজেপি ৩১টি, কংগ্রেস ১৪টি পেয়েছে। ভোট লুট হলে পেল কোথা থেকে?’’ পাশাপাশি, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার গত পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় ৯৭ শতাংশ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেনি? আর এখানে ৮৭ শতাংশ আসনে ভোট হয়েছে।

মালদহ নির্যাতন প্রসঙ্গ

বৃহস্পতিবার মালদহ প্রসঙ্গেও বিধানসভায় মন্তব্য করেন মমতা। চুরির অভিযোগে দুই মহিলাকে ‘বিবস্ত্র’ করে মারধর এবং গ্রেফতার ঘটনাকে তিনি ‘মেয়েদের মধ্যে মারামারি’ বলে ব্যাখ্যা করেন। এ নিয়ে রাজ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানান মমতা। প্রসঙ্গত, গণপ্রহারের ঘটনায় শুধু অভিযুক্তদেরই নয়, ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলেছে পাকুয়াহাটকাণ্ডের দুই ‘নির্যাতিতা’ই। গত মঙ্গলবার রাতে মেল মারফত পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ করেছে, রিপোর্টে সবই উল্লেখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এর পরেই বুধবার, ঘটনার পাঁচ দিন পর পাকুয়াহাট ফাঁড়ির ওসি রাকেশ বিশ্বাস, এক জন সাব-ইনস্পেক্টর এবং এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, ‘‘মালদহে একটা ঘটনা ঘটেছিল। চুরি করতে গিয়েছিল। ওটা মেয়েদের-মেয়েদের মধ্যে মারামারি। গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’

মোদীকে মণিপুর কটাক্ষ

বাদল অধিবেশনেই রাজ্য বিধানসভায় মণিপুর নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনার কথা শাসকদলের। আগামী সোমবার সেই প্রস্তাব আনার কথা। তবে বৃহস্পতিবারই মমতার বক্তব্যে এল মণিপুর প্রসঙ্গ। গত মে মাস থেকে মণিপুরে দুই জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জনের বেশি মানুষ। এই নিয়ে নাম না করেই প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘মণিপুর নিয়ে অত ভয় কিসের? আপনি এ দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। টাকা দিয়ে উপহার দিচ্ছেন। আর মণিপুর জ্বলছে। মিজোরাম জ্বলছে।’’ পুলওয়ামা নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপালের মন্তব্য টেনেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটে ‘হিংসা’-র অভিযোগের জবাব দিতে তিনি বলেন, ‘‘পুলওয়ামা কাণ্ডে রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, কী ভাবে মারা গেল জওয়ানরা?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement