বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে গোলমাল বাঁধানোর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর, পাল্টা আক্রমণ শুভেন্দুর। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দিল্লিতে বিজেপির ‘গোপন বৈঠক’ বাংলায় গোলমাল পাকানোর কৌশল ঠিক করতেই। এমনই অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এ রাজ্যে মণিপুরের মতো গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাতে চাইছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করলে, তার পাল্টা জবাব দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।বিধানসভায় নিজের বক্তৃতার শেষাংশে মমতা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে ওরা কি প্ল্যানিং করে এসেছে আমি সবটা বলব না, কিছুটা বলব। শুধু ওদের সোর্স নেই, আমাদেরও সোর্স আছে। বৈঠকে এখানকার প্রেসিডেন্ট (সুকান্ত মজুমদার) ছিলেন এ ছাড়া বড় বড় নেতারা ছিল। ওরা পঞ্চায়েত নিয়ে আলোচনা করেছে। সেটা আমি আর বলছি না।’’ এর পর তিনি আরও বলেন, কিন্তু প্রধান অ্যাজেন্ডা হতে চলেছে নির্বাচনে মাইলেজ পেতে আগামী দিনে সমাজকে ধর্ম এবং সামাজিকতার ভিত্তিতে বিভাজিত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এ ভাবেই মণিপুরে জাতিদাঙ্গা লেগেছে। দ্বিতীয় অ্যাজেন্ডা নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিজেপি নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ঘটনাগুলিকে হাইলাইট করতে হবে। একই ভাবে এসসি-এসটিদের উপর আক্রমণের ঘটনাতেও সিমপ্যাথির জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে বসবাসকারী রাজবংশী ও মতুয়া সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটানো হতে পারে। এই সব বিষয়ে ওরা ফান্ডিং করবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী যখন এমন সব অভিযোগের বাণে বিদ্ধ করছেন বিজেপি নেতৃত্বকে, ততক্ষণে বিক্ষোভ দেখিয়ে বিধানসভার অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন বিজেপি বিধায়করা। বিধানসভায় নিজের সাংবাদিক বৈঠকে এমন অভিযোগের জবাব দেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে এ সব কথা বলছেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। কারণ যে বৈঠকের কথা উনি বলছেন, তাতে এ রাজ্য থেকে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও আমি, শুভেন্দু অধিকারী। যাঁরা দু’জনেই বৈঠক প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কিছুই বলবেন না।’’ সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী কী বলেছেন, তা আমি জানি না। তবে এটা বলতে চাই, বাংলার দুর্নীতিপরায়ণ সরকারকে সরাতে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব সবরকম ব্যবস্থা নেবেন। আর তা ভোটের মাধ্যমেই হবে। ভোটের মাধ্যমেই আমরা এই সরকারকে সরাব।’’
উল্লেখ্য, গত রবিবার সন্ধ্যার বিমানে দিল্লি যান বিরোধী দলনেতা। সোমবার সেখানে বিজেপির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একটি বৈঠকেও যোগ দেন। সোমবার গভীর রাতে কলকাতায় ফিরে এলেও, মঙ্গলবার বিধানসভায় বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর শেষযাত্রার যাবতীয় বন্দোবস্ত করে আবারও দুপুরের বিমানে রাজধানী পাড়ি দেন। সেখানও সুকান্ত ও শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগদান করেন। বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, শুভেন্দু-সুকান্তের সঙ্গে শাহের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনেই অভিযোগ করেছেন মমতা।